🔶 ১৫ বছরের শাসনপথে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’— ভোটের আগে নতুন পর্যবেক্ষক বাহিনী গড়ে মমতার মাস্টারস্ট্রোক

ভোটের আগে নতুন পর্যবেক্ষক বাহিনী গড়ে মমতার মাস্টারস্ট্রোক

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর ঘোষণা ভোটের হাওয়ায় যেন জাদুর পরশ বুলিয়ে দিয়েছিল। বাংলাজুড়ে তখন তুমুল আলোচনায় ছিল মহিলাদের হাতে সরাসরি অর্থ পৌঁছে দেওয়ার রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত। সেই যাদুকরী সাফল্যকে সামনে রেখেই ২০২৬-এর ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন হাজির করলেন আর এক নতুন রাজনৈতিক অস্ত্র— ‘উন্নয়নের পাঁচালি’।

মঙ্গলবার নবান্নে রাজ্যে তাঁর সরকার গত ১৫ বছরে কী কী উন্নয়নমূলক কাজ করেছে, তার সংক্ষিপ্ত চিত্র উপস্থাপন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিন মেয়াদের রিপোর্ট কার্ডের এই সরকারি উপস্থাপনাকে যেমন বলা হচ্ছে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’, শাসক শিবিরের অনেকেই মমতার নতুন এই উদ্যোগকে তুলনা করছেন তাঁরই ‘পথের পাঁচালি’র সঙ্গে— বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার বার্তা নিয়ে।

ঐতিহ্য থেকে রাজনীতিতে ‘পাঁচালি’— মমতার ব্যাখ্যা

মমতার বক্তব্য, আগে গ্রাম বাংলায় মা-ঠাকুমারা পাঁচালি পড়তেন, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রচলন হারিয়ে যাচ্ছে। তাই ঐতিহ্যকে ফিরে আনতেই ব্যবহার করা হয়েছে এই নাম। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নামকরণে সূক্ষ্ম কৌশল রয়েছে— ‘লক্ষ্মী’র পরে ‘পাঁচালি’-র মতো শব্দ ব্যবহার করে সাংস্কৃতিক আবহ রক্ষা করার পাশাপাশি বিজেপির হিন্দুত্ব রাজনীতির মোকাবিলায় নিজের পথটা আরও দৃঢ় করলেন মমতা।

তথ্যচিত্র, কীর্তন— নতুন ঢঙে উন্নয়নের কাহিনি

কর্মসূচির শুরুতেই দেখানো হয় একটি তথ্যচিত্র—
যেখানে তুলে ধরা হয় পরিকাঠামোর বৃদ্ধি, সামাজিক প্রকল্পের বিস্তার, গ্রামীণ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা থেকে কৃষির ক্ষেত্রের অগ্রগতি।

তার পর মমতা ডেকে নেন সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তীকে।
খোল-খঞ্জনির তালে ইমন যখন কীর্তনের ভঙ্গিতে ‘পাঁচালি’ পাঠ করেন, তখন সেই কথায় প্রতিধ্বনিত হয় সরকারের জনমুখী ভাবনা, বাংলার সম্প্রীতির বার্তা এবং সমাজকল্যাণ প্রকল্পের সারাংশ।

১৫ বছরের হিসাব— মমতার দাবি

মমতা জানান—

• গত ১৪ বছরে রাজ্যের কর ও রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৫.৩৩ গুণ
• মূলধনি ব্যয় বৃদ্ধি ১৭.৬৭%
• সামাজিক খাতে বৃদ্ধি ১৪.৬৪%
• কৃষিখাতে ব্যয় বেড়েছে ৯.১৬ গুণ

তবে এও জানান, পুরো তথ্য এখনও একত্রিত হয়নি। আরও কিছু দিন লাগবে সম্পূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশে।

নির্বাচনের আগে বড় পদক্ষেপ— ১০ জনের বিশেষ পর্যবেক্ষক বাহিনী

মমতা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন— নির্বাচনের সময় হলেও চলমান প্রকল্পগুলির কাজ যেন কোনও ভাবেই থমকে না যায়।
এ জন্য তিনি ঘোষণা করলেন—

🔸 ১০ জন শীর্ষ আধিকারিকের বিশেষ পর্যবেক্ষক দল
যারা জেলায় জেলায় গিয়ে আবাস যোজনা, রাস্তা, জলসংযোগ, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবেন।

তিনি মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে আরও একটি কেন্দ্রীয় ‘মনিটরিং টিম’ গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন।

‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’— বুথস্তরে সরকারের উপস্থিতি

পুজোর আগে থেকেই চালু হওয়া এই প্রকল্পে সাধারণ মানুষ তাঁদের এলাকার সমস্যার কথা জানাচ্ছেন বুথ স্তরে দাঁড়িয়ে।
প্রতি বুথের জন্য সরকারি বরাদ্দ— ১০ লক্ষ টাকা।

মমতার বার্তা—
দুই মাসের মধ্যেই দৃশ্যমান ফল চাই।
যে জেলা দ্রুত ও সুষ্ঠু ভাবে কাজ করবে, তাদের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে পুরস্কার।

রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট

বিজেপি যেখানে হিন্দুত্বকে সামনে রেখে প্রচারে নামছে, সেখানে মমতার ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ বা ‘পাঁচালি’র মতো সাংস্কৃতিক নামকে কৌশলগত রাজনৈতিক অস্ত্র মনে করছেন অনেকে।
প্রকল্পের সারবস্তু যেমন উন্নয়ন, বার্তাটি পৌঁছচ্ছে গভীর আবেগের স্তরেও।

মমতার কথায়—
“আমরা রাজ্যবাসীর কাছে দায়বদ্ধ। উন্নয়নের পাঁচালি তাঁদের হাতেই তুলে দিচ্ছি।”