‘ইন্ডাস্ট্রি নিজেই জানে না কী চায়’— ক্ষোভে ফেটে পড়লেন অনন্যা, তনিকা, সৃজলা!
টলিউডে কাজ পাওয়া আজকের অভিনেত্রীদের কাছে কতটা কঠিন, তা নতুন করে ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর উপর ‘হিরোইন মেটিরিয়াল’ নামক অদৃশ্য তকমা— যে তকমার নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, কিন্তু ওজন, গায়ের রং, উচ্চতা ও সৌন্দর্যের এক আশ্চর্য মিশ্রণ চাই বলেই দাবি ইন্ডাস্ট্রির। আর এই দাবি পূরণ না হলেই নাকি অভিনেত্রীদের হাতে আসে না কাজ। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন অনন্যা সেন, তনিকা বসু, সৃজলা গুহ, বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়-সহ একাধিক তরুণী অভিনেত্রী।
সম্প্রতি এক প্রযোজনা সংস্থার নতুন টক শোয়ের প্রচার অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন অনন্যা। সেখানেই অভিনয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলে জানান, “বলিউডে অডিশন দিচ্ছি, নাটকের প্রশিক্ষণ নিচ্ছি— এইভাবেই চলছে। মুঠোভর্তি কাজ নেই, কিন্তু চেষ্টা থামাইনি।” ‘স্বার্থপর’ ছবিতে কোয়েল মল্লিকের বান্ধবীর চরিত্রে তাঁর অভিনয় বেশ প্রশংসিত হলেও কাজের সংখ্যা তেমন বাড়েনি।
অন্যদিকে, পুজোয় মুক্তি পাওয়া ‘দেবী চৌধুরাণী’-তে ‘নিশি’ চরিত্রে নজর কেড়েছিলেন বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “ওই ছবির পর অভিরূপ ঘোষের একটি কাজে যুক্ত হয়েছি। কিন্তু তারপর হাতে আর কিছু নেই।” সৃজলা গুহ, যিনি সিরিজ় এবং নৃত্যে সমান দক্ষ, হাসতে হাসতে বললেন, “নিজের মতো থাকি। বহুদিন পর আবার এই রকম অনুষ্ঠানে এলাম! কাজের জন্য দৌড়োতেই হয়।”
তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ঝরেছে তনিকা বসুর কথায়। ‘চালচিত্র’ ছবিতে সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত মেয়ের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন কাড়লেও সেই চরিত্রই যেন তাঁর মাথায় স্থায়ী ট্যাগ হয়ে গেছে। তনিকার অভিযোগ, “সবার কাছে কাজ চেয়েছি। কিন্তু ডাক আসে সেই একই ধরনের চরিত্রে। আমি কি আজীবন ওই এক ভূমিকাই করব? অভিনয় মানে তো বহু চরিত্রের ভেতর দিয়ে যাত্রা!” তাঁর আরও সংযোজন, “টলিউডের ভিতরে অনেক ‘খেলা’ চলে। যাঁরা সেই খেলা খেলতে পারেন, কাজ পান; বাকিরা আমরা।”
বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির পক্ষপাতিত্ব নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অভিনেত্রীরা।
অনন্যার স্পষ্ট বক্তব্য— “যতক্ষণ শরীরে সমস্যা না হচ্ছে, রোগা হব না। আমার মতো শরীরের গড়নেও নায়ক-নায়িকা হওয়া যায়। ওজন নিয়ে অত বিচার করা বন্ধ হোক।”
তাঁর উদাহরণ— বলিউড অভিনেত্রী ভূমি পেডনেকর, যিনি ‘দম লাগাকে হইসা’-র জন্য ইচ্ছে করেই ওজন বাড়িয়েছিলেন। বিবৃতি, তনিকা ও সৃজলার মতে, “প্রতিভা থাকলে চেহারার কোনও মূল্য নেই। কিন্তু এখানে উল্টো হচ্ছে। সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে যোগ্যরা বাদ পড়ছেন, আর অযোগ্যরা সুযোগ পাচ্ছেন।”
সোশ্যাল মিডিয়া ফলোয়ার সংখ্যা দিয়ে কাজ মাপার প্রবণতাতেও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তনিকার কথায়, “যাঁদের লক্ষাধিক অনুসরণকারী, তাঁরাই বা কতটা হিট ছবি দিতে পারছেন? জনপ্রিয়তা আর দক্ষতা এক জিনিস নয়।”
তবে ব্যতিক্রমও আছেন। অলিভিয়া সরকার জানিয়েছেন, তিনি বরাবরই বেছে কাজ করেন। বহুদিন ছোটপর্দা থেকে বিরতি নেওয়ার পর ‘মিলন হবে কতদিনে’-র মাধ্যমে ফের নতুন ইনিংস শুরু করেছেন তিনি।
সব মিলিয়ে নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রীদের বক্তব্য একটাই—
টলিউড আগে নিজের কাঠামো নির্ধারণ করুক, তারপর শিল্পীদের বিচার করুক।
নইলে শূন্য প্রত্যাশা নিয়ে অভিনেত্রীদের দৌড়ঝাঁপ চলতেই থাকবে।

