🎬 ‘চপেটাঘাত করা সিনেমা’ সবার রুচি নয়: ঋত্বিক ঘটকের বহু ছবি নিজেও দেখেন না পরমব্রত!

ঋত্বিক ঘটকের বহু ছবি নিজেও দেখেন না পরমব্রত!

ঋত্বিক ঘটক— বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি তীব্র, তীক্ষ্ণ, বিভ্রান্তিকর, অথচ অনন্য নাম। তাঁর কাজ ‘ভাল লাগে’ কি ‘ভাল লাগে না’— এই কথাটাই বলা কঠিন। আর সেই কঠিন কথাটাই অকপটে উচ্চারণ করলেন তাঁরই পরিবারের সদস্য, অভিনেতা ও পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।

পরমব্রতর সরাসরি কথায়—
“ঋত্বিকের বেশ কিছু ছবি আমার ভাল লাগে না। কারণ ও ছবিগুলো দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য বানানো হয়নি। তা দেখলে চড় খাওয়ার মতো লাগে!”

“সিনেমা কি শুধু গল্প বলার জন্য?”

আনন্দবাজার ডট কমকে পরমব্রত বলেন—
“আমরা ছোটবেলা থেকে গল্পভিত্তিক সিনেমা দেখে বড় হয়েছি। তাই পর্দায় নাটক, গল্প, আবেগ দেখতে চাই। কিন্তু ঋত্বিক ঘটক সিনেমাকে ব্যবহার করেছেন ইতিহাসের নিষ্ঠুর সত্য দেখানোর অস্ত্র হিসেবে। সেটা কার ভাল লাগে? কারও মন খারাপ হোক, কেউ ভাবুক— এমন সিনেমা তো জনপ্রিয় হয় না।”

এই বছরের ঋত্বিক ঘটকের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এপিজে বাংলা সাহিত্য উৎসবে তাঁকে স্মরণ করা হয়। আলোচনায় যোগ দেওয়া পরমব্রত সেখানে নিজের এই অনুভূতি স্পষ্ট করেছেন।

কেন কঠিন ঋত্বিকের সিনেমা?

• তিনি ড্রামা বা গল্প-এ আগ্রহী ছিলেন না
• তিনি মানুষের দুঃসহ ইতিহাস, সমাজের ক্ষত, বিভাজনের যন্ত্রণা দেখিয়েছেন
• তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সিনেমায় ঝাঁকুনি দেওয়া, আরাম দেওয়া নয়
• তাই অধিকাংশ দর্শক তাঁর ছবি বুঝে ওঠেন না

পরমব্রতর ভাষায়—
“ঋত্বিক ছবির মাধ্যমে কষে চপেটাঘাত করেন। সবাই সেই সত্য সহ্য করতে পারে না।”

ঋত্বিক বনাম সত্যজিৎ: ভুল তুলনা?

পরমব্রত মনে করেন—
বাংলা দর্শক দুই মহান পরিচালকের ‘ছবি’ নয়, তাঁদের ব্যক্তিত্বকেই মেরুকরণ করেছে।

সত্যজিৎ রায় → সত্‍পুরুষ, পরিপাটি, শুদ্ধ শিল্পী
ঋত্বিক ঘটক → বিখ্যাত কিন্তু ‘বিশৃঙ্খল’, মদ্যপ, ‘বিপ্লবী’ ভাবমূর্তি

পরমব্রত বলেন—
“ঋত্বিক মানেই অপব্যয়ী প্রতিভা— এই ধারণা ভুল। তিনি বাঙালির সবচেয়ে গভীর ভাবনার জায়গায় আঘাত করেছিলেন।”

তাহলে পরমব্রত কি ভবিষ্যতে ঘটকের মতো ছবি বানাবেন?

উত্তর না।
অত্যন্ত স্পষ্ট স্বরে তিনি বলেন—

“আমি ঋত্বিক ঘটকের মতো ছবি বানাতে পারব না। বানাতেও চাই না। আমি এখনকার সময়, এখনকার দর্শকের জন্য ছবি বানাই।”