শব্দবাজির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ প্রাণীকুল!
আলোয় ভরা উৎসব দীপাবলি কবে যেন শব্দের আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এই সময়ে শুধু মানুষ নয়, পশু-পাখি, এমনকি গাছপালাও সহ্য করে অমানবিক কষ্ট। শব্দবাজির তীব্র আওয়াজ, ধোঁয়া ও আলোর ঝলকানিতে তাদের মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র ও রূপাঞ্জনা মিত্র— তিনজনেই এই অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
🌱 তথাগত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য: “গাছেরও প্রাণ আছে”
“মানুষ ভুলেই গিয়েছে যে গাছেরও প্রাণ আছে,” বলেন তথাগত।
তিনি আরও যোগ করেন, “আলোর উৎসবের নামে গাছে আলো লাগানো, বোম ফাটানো— এগুলো কি প্রয়োজনীয়? দীপাবলি তো আনন্দের উৎসব, শব্দের নয়।”
তাঁর মতে, শব্দবাজির এই প্রতিযোগিতা পারিবারিক শিক্ষার অভাবেরই প্রতিফলন।
“যে আওয়াজ আমাদের কানে যেমন শোনা যায়, পশুরা সেটা ৮–১০ গুণ বেশি জোরে শুনতে পায়। একটা চকলেট বোমে আমরা যখন চমকে উঠি, তখন ভাবুন তো, ওদের কেমন লাগে!”
🐾 শ্রীলেখা মিত্রের ক্ষোভ: “উৎসবের নামে অন্যকে কষ্ট দেওয়া যায় না”
অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র জানান, “শব্দের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও বাস্তবে তা মানা হয় না। বাজির আওয়াজে পাখিরা মারা যায়, নবজাতক ও বৃদ্ধদের ঘুম নষ্ট হয়। এই পৃথিবীটা শুধু মানুষের নয়।”
তিনি বলেন, “যেমন পশুর রোম দিয়ে পোশাক নিষিদ্ধ হয়েছে, তেমনই শব্দবাজির বিরুদ্ধেও আমাদের সচেতন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
🕊️ রূপাঞ্জনা মিত্রের অভিজ্ঞতা: “আমার পোষ্য ভয়ে কাঁপছিল”
রূপাঞ্জনা জানান, “ব্যান্ড পার্টির বাজনায় আমার পোষ্য আতঙ্কে কাঁপছিল। এখন আমি ওদের শব্দনিরোধক ঘরে রাখি, যাতে একটু শান্তি পায়।”
তিনি পরামর্শ দেন —
| করণীয় | ব্যাখ্যা |
|---|---|
| 🏠 পোষ্যকে শব্দনিরোধক ঘরে রাখুন | আওয়াজ থেকে দূরে রাখলে তারা নিরাপদ বোধ করবে |
| 🎧 হালকা সঙ্গীত চালান | আশপাশের শব্দ ঢেকে যাবে |
| 🕯️ বাজি কম ব্যবহার করুন | নিজের আনন্দে অন্য প্রাণীর ক্ষতি যেন না হয় |
| 🚫 অবৈধ বাজি ব্যবহার করবেন না | আইন মানলে পরিবেশও রক্ষা পায় |
⚠️ কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
পশুচিকিৎসকদের মতে, তীব্র শব্দে কুকুর ও বিড়ালের হৃদযন্ত্রে চাপ পড়ে, মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। পশুপালন দপ্তরের নির্দেশিকাতেও উৎসবের সময় বাজি ব্যবহারে সংযমের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দদূষণ কেবল প্রাণীকুল নয়, গাছের কোষের বৃদ্ধি ও প্রজননেও প্রভাব ফেলে।
🌍 মানুষকেই বদল আনতে হবে
তথাগত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আইন থাকলেও প্রয়োগ না হলে কিছুই হবে না। আমাদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে।”
শ্রীলেখার কথায়, “জন্তুরা অনেক বেশি ভালো। ওরা নিজের স্বার্থে হত্যা করে, মানুষ তা করে বিনোদনের জন্য।”
রূপাঞ্জনা শেষ কথায় বলেন, “নিজেদের আনন্দ যেন অন্যের আতঙ্কে পরিণত না হয়, সেটাই আসল মানবতা।”

