🌨️ বরফের দেশে নতুন সংকেত: আন্টার্কটিকার বিস্তীর্ণ অংশে কেন মিলছে না বরফ? বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

বরফের দেশে নতুন সংকেত!

বিশ্বের বৃহত্তম তুষার মরুভূমি—আন্টার্কটিকা। যতদূর চোখ যায় সাদা বরফের সমুদ্র, অবারিত প্রান্তর, হিমেল নিস্তব্ধতা। এই জনহীন শীতল মহাদেশ বহু দশক ধরে গবেষকদের কৌতূহলের কেন্দ্র। কিন্তু সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে এমন এক তথ্য সামনে এসেছে, যা বিজ্ঞানীদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আন্টার্কটিকার এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে বরফ বা বরফের সূক্ষ্ম কণার উপস্থিতি দ্রুত নিম্নমুখী। এমনকি কিছু অংশে বরফ প্রায় নেই বললেই চলে। দীর্ঘমেয়াদে এই পরিবর্তন বিশ্ব উষ্ণায়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।

বরফের অভাব—কারণে কী?

এই চিন্তার মূল উৎস আন্টার্কটিকার আকাশে গঠিত মেঘ। গবেষকদের নতুন তথ্য জানাচ্ছে, মহাদেশটির বহু জায়গায় মেঘে যে সূক্ষ্ম কণাগুলি বরফ জমাট বাঁধার কাজে সাহায্য করে—তাদের ঘাটতি স্পষ্ট।
এই কণাগুলিকে বলা হয় আইস নিউক্লিয়েটিং পার্টিক্‌লস (INP)। এগুলির উৎস হতে পারে—

• খনিজের ধুলো,
• ভূমি থেকে উড়ে আসা মাটি,
• ছাই,
• কিংবা জীবাণু বা উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আগত ক্ষুদ্র প্রোটিন-সমৃদ্ধ কণা।

এই কণাগুলি মেঘের ভেতরে জলবিন্দুকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। সাধারণত মেঘের তাপমাত্রা বরফ তৈরির পক্ষে খুব উপযুক্ত না হলেও INP উপস্থিত থাকলে বরফকণা তৈরি হয় এবং সেই বরফই বহু ক্ষেত্রে দক্ষিণ গোলার্ধকে সূর্যের অতিরিক্ত তাপ থেকে রক্ষা করে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে—আন্টার্কটিকার দক্ষিণতম দু’টি অঞ্চলে INP-র উপস্থিতি অত্যন্ত কম। ফলে মেঘে বরফের বদলে তরল জলবিন্দুর পরিমাণ বাড়ছে—যা ভবিষ্যতের জন্য বিপদের বার্তা।

গবেষণায় কী জানা গেল?

জার্মানির লেইবনিজ় ইনস্টিটিউটের গবেষক দলের সদস্যরা আন্টার্কটিকার বিভিন্ন অংশ থেকে বায়ুর নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেছেন। ফলাফল দেখে তাঁরাও বিস্মিত। তাঁদের মতে—

• INP-র ঘাটতির অন্যতম কারণ ওই অঞ্চলে জৈব উপাদানের অভাব,
• এই ঘাটতি আগামী দিনে মহাদেশটির আরও বিস্তীর্ণ অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে,
• INP কমে গেলে বরফের পরিবর্তে মেঘে বাড়বে অতিশীতল তরল জলকণা, যা জলবায়ুর ভারসাম্য বদলে দিতে পারে।

তাঁদের এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে জিওফিজ়িক্যাল রিসার্চ লেটার্স পত্রিকায়।

বরফ-স্বল্প মেঘ আদৌ কি ক্ষতিকর?

আশ্চর্যের বিষয়, বিশাল সমস্যার পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাকে কিছুটা আশীর্বাদও বলছেন।

কারণ—

• বরফকণা কম থাকলে জলকণা বেশি থাকে,
• জলকণা সূর্যালোক প্রতিফলিত করে মহাকাশে ফেরত পাঠাতে পারে,
• এর ফলে দক্ষিণ গোলার্ধ অতিরিক্ত উষ্ণতা থেকে রেহাই পায়।

এটাকেই তারা বলছেন—‘প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ’।

কিন্তু ঝুঁকিও কম নয়।

কোথায় লুকিয়ে ভবিষ্যতের বিপদ?

গবেষকদের আশঙ্কা—বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে মেঘে বরফকণা বরং বাড়তেও পারে।

কারণ—

• হিমবাহগুলি গলে বিভিন্ন জৈব পদার্থ, ধুলিকণা, উদ্ভিজ্জ উপাদান নিয়ে আসবে,
• ফলে INP-এর পরিমাণ বেড়ে মেঘ আরও বেশি বরফ ধারণ করতে শুরু করবে,
• বরফ সূর্যালোক প্রতিফলিত করার ক্ষেত্রে জলকণার মতো কার্যকর নয়,
• ফলে দক্ষিণ গোলার্ধ বাড়তি তাপ শোষণ করবে।

এই প্রক্রিয়া দ্রুত হলে আন্টার্কটিকার হিমবাহ গলন আরও বাড়তে পারে—যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো ভয়াবহ পরিণতি আনবে।

সমাধান কোথায়?

বিশেষজ্ঞদের মতে—

• আন্টার্কটিকায় অবিলম্বে আরও গভীর বৈজ্ঞানিক গবেষণা দরকার,
• পরিবেশগত পরিবর্তন সম্পর্কে যত বেশি তথ্য পাওয়া যাবে, তত দ্রুত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে,
• এই বরফমরুভূমির ভবিষ্যৎ বোঝা বিশ্ব জলবায়ু নীতির জন্য অপরিহার্য।