🔶 প্রাথমিক নিয়োগে ভাগ্যের টানাপোড়েন: ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল মামলায় বুধবার হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়

৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল মামলায় বুধবার হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়

রাজ্যের বহুচর্চিত প্রাথমিক নিয়োগ মামলার রায় ঘোষণা হবে বুধবার। কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ দুপুর ২টোয় এই মামলার চূড়ান্ত আদেশ দেবে। কয়েক বছর ধরে চলা আইনি লড়াইয়ের পর লক্ষাধিক চাকরিপ্রার্থী, বিদ্যমান শিক্ষক এবং শিক্ষা প্রশাসনের নজর এখন এই রায়ের দিকেই।

২০১৬ সালের নিয়োগে প্রায় ৪২,৫০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছিলেন। অভিযোগ ওঠে, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার ভিত্তিতে হওয়া এই নিয়োগে ব্যাপক বেনিয়ম এবং অনিয়ম হয়েছে। এরপর ২০২৩ সালের ১২ মে হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ঐতিহাসিক রায় দেন—
৩২,০০০ প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হবে।

তার নির্দেশ ছিল,

• চাকরি বাতিল হলেও শিক্ষকরা স্কুলে উপস্থিত থাকবেন
• তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে
• যাঁরা যথাযথভাবে যোগ্য বা প্রশিক্ষিত, তাঁদের চাকরি বহাল থাকবে

⭐ সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা

বিচারপতির রায়ের পরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ডিভিশন বেঞ্চে যায়। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের চাকরি বাতিলের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেন। তবে একই সাথে বলেন— নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া অবশ্যই শুরু করতে হবে।

এরপর মামলায় নতুন মোড় আসে, যখন রাজ্য সরকারসহ চাকরিচ্যুতদের একটি বড় অংশ সুপ্রিম কোর্টে যান। তাঁদের বক্তব্য—
সিঙ্গল বেঞ্চে সব পক্ষকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয়— হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চকে সব পক্ষের কথা শুনে রায় দিতে হবে।

এর পর থেকেই মামলা বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং ঋতব্রতকুমার মিত্রর বেঞ্চে আসে। প্রায় কয়েক মাসের শুনানি শেষে ১২ নভেম্বর রায় স্থগিত রাখা হয়। অবশেষে বুধবার ঘোষিত হবে সেই বহু প্রতীক্ষিত আদেশ।

⭐ মামলায় পক্ষগুলির বক্তব্য

মামলাকারী পক্ষের অভিযোগ:

• প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে
• পরীক্ষার নিয়ম মানা হয়নি
• অনেক অযোগ্য প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন

রাজ্য সরকার ও পর্ষদের দাবি:

• দুর্নীতির অভিযোগ অত্যুক্তি
• কিছু অনিয়ম থাকলেও পরে তা সংশোধন করা হয়েছে
• রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধীরা বিষয়টিকে বড় করে দেখাচ্ছে

⭐ চাকরিপ্রার্থীদের চোখ এখন রায়ের দিকে

মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ৩২ হাজার শিক্ষক তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আবার হাজার হাজার টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী নতুন নিয়োগের অপেক্ষায়।

এই রায় শুধু শিক্ষকদের চাকরির ভাগ্যই ঠিক করবে না, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উপরও গভীর প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

⭐ কেন গুরুত্বপূর্ণ এই রায়?

• ৪২,০০০-এর বেশি নিয়োগ যুক্ত মামলার রায়
• ৩০ হাজারের বেশি চাকরি থাকা না থাকা নির্ভর করছে সিদ্ধান্তের উপর
• ভবিষ্যতের নিয়োগ নীতি ও স্বচ্ছতার মানদণ্ড নির্ধারিত হতে পারে
• রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তাপও বাড়তে পারে ফলাফলের ভিত্তিতে

সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর এবার আদালতের রায়ই ঠিক করবে—
২০১৬ সালের প্রাথমিক নিয়োগ কতটা বৈধ ছিল, আর ভবিষ্যতের পথ কোন দিকে যাবে।