বাংলায় নেই আদানির বিনিয়োগ!
দেশের বিভিন্ন রাজ্যে শিল্প সম্মেলনের মাধ্যমে বিনিয়োগ টানার প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। রিলায়্যান্স, আদানি, জিন্দল, টাটা, আদিত্য বিড়লা, বেদান্তের মতো দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীগুলি একের পর এক রাজ্যে বিপুল লগ্নির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের নামই নেই!
🏭 কোন রাজ্যে কত বিনিয়োগ?
সম্প্রতি আদানি গোষ্ঠী যে রাজ্যগুলিতে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিজেপি শাসিত রাজস্থান। গত ডিসেম্বরে সেখানে শিল্প সম্মেলনে ৭.৫ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব দিয়েছে গৌতম আদানির সংস্থা। এছাড়াও ওড়িশা, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, অসম, তামিলনাড়ু, কেরল— প্রায় সব রাজ্যেই বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে। এমনকি কর্নাটকে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও সেখানে ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি লগ্নির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আদানিরা।
কিন্তু বাংলার ক্ষেত্রে?
❌ পশ্চিমবঙ্গে কেন নেই আদানিরা?
২০২৫ সালের বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলন (BGBS) বাদে দেশের প্রায় প্রতিটি শিল্প সম্মেলনেই উপস্থিত ছিল আদানি গোষ্ঠী। ফলে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাকে কি তারা এড়িয়ে যাচ্ছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলায় আদানিদের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিল তাজপুর বন্দর। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পে ২৫,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও জানিয়েছেন, “কিছু ত্রুটি থাকায় তাজপুরের দরপত্র নতুন করে করা হতে পারে।”
দেড় বছর আগে রাজ্য সরকার আদানিদের এই বন্দরের জন্য অনুমতি দিলেও, তারপরে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
📉 বাংলায় আদানিদের সীমিত উপস্থিতি
তাজপুর বাদ দিলে, পশ্চিমবঙ্গে আদানিদের বিনিয়োগের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম।
🔹 পানাগড়-পালসিট ৬৮ কিমি জাতীয় সড়ক তৈরির বরাত পেয়েছে আদানি গোষ্ঠী (লগ্নি প্রায় ২০২১ কোটি টাকা)
🔹 বর্ধমানে ইন্ডিয়ান অয়েলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প (লগ্নি ২০০-৩০০ কোটি টাকা)
🔹 হলদিয়া, বর্ধমান ও হুগলিতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা, যেখানে ১২০০-১৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ
🔹 বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে পশ্চিমবঙ্গের কিছু এলাকায় আদানি পাওয়ারের উপস্থিতি
তবে তুলনামূলকভাবে, অন্যান্য রাজ্যের লগ্নির তুলনায় বাংলায় আদানিদের বিনিয়োগ নগণ্য।
⚖️ রাজনৈতিক কারণ নাকি শিল্প নীতি?
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, আদানিদের প্রতি তৃণমূলের কড়া অবস্থানই বাংলার বিনিয়োগ তালিকা থেকে তাদের বাদ পড়ার মূল কারণ।
🔸 বাম এবং কংগ্রেস শাসিত রাজ্যেও আদানিরা লগ্নির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে নয়
🔸 হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের পর আদানির বিরুদ্ধে তৃণমূল বারবার আক্রমণ শানিয়েছে, যা শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের সম্পর্ককে আরও জটিল করেছে
🔸 সরকারি নীতি ও অব্যবস্থার কারণেও অনেক শিল্পগোষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়
এক শিল্প কর্তার মতে, “দেশের যে ক’টি সংস্থার লগ্নি এখন সব রাজ্যই পেতে চায়, তার মধ্যে আদানিরা অন্যতম। তাই বাংলায় তারা বিনিয়োগ করতে চায় না কেন, সেটা সরকারের ভাবার বিষয়। নইলে রাজ্য লগ্নি টানার দৌড়ে পিছিয়ে পড়বে।”
🔮 ভবিষ্যৎ কী বলছে?
আদানিরা বাংলায় বিনিয়োগ করবে কি না, তা নির্ভর করবে সরকারের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের ওপর। তাজপুর বন্দর প্রকল্প পুনরায় চালু হলে হয়তো বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। তবে আদানি গোষ্ঠী ইতিমধ্যেই দেশের প্রায় সব রাজ্যে বিনিয়োগ করছে, কিন্তু বাংলাকে দূরে সরিয়ে রাখছে— এটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
শিল্পের দিক থেকে এগিয়ে যেতে চাইলে রাজ্য সরকারকে আরও কৌশলী হতে হবে, নইলে বিনিয়োগের তালিকায় বাংলা ব্রাত্যই থেকে যাবে।
গঙ্গায় ট্রলি ব্যাগে লাশ ফেলতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা মা-মেয়ে! কী বলল জেরায়?