Thursday, January 30, 2025

শরীরচর্চার বিশেষ পদ্ধতিতে পিছিয়ে যাবে বার্ধক্য! রোজ ৩০ মিনিট দৌড়ানোর শক্তিশালী উপকারিতা

Share

শরীরচর্চার বিশেষ পদ্ধতিতে পিছিয়ে যাবে বার্ধক্য!

বয়স বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরের কোষগুলোর ক্ষয়-ক্ষতি বেড়ে যায়, যা আমাদের দেহের শারীরিক ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তবে সম্প্রতি আমেরিকার গবেষকরা এমন একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন, যেখানে তারা দাবি করেছেন যে, রোজ মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য কিছুটা শরীরচর্চা, বিশেষত দৌড়ানো, শরীরের কোষের ক্ষয়কে অনেকটা বিলম্বিত করতে পারে। এর মাধ্যমে বার্ধক্যকে পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব, এমনকি প্রায় ৯ বছর!

দৌড়ানো কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আমরা জানি, শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে শুধু ওজন কমানো সম্ভব নয়, বরং এটি শরীরের কোষগুলির ক্ষতও মেরামত করে। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে কোষের পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়, যার ফলে কোষের ক্ষয় প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। মানুষের বয়সের সঙ্গে তার কোষের ক্ষয়ের হার কমানোর পদ্ধতি নিয়ে বহু গবেষণা চলছে। এবং নতুন এক গবেষণায় এমন দাবি করা হয়েছে যে, রোজ ৩০ মিনিট করে দৌড়ালে শরীরের কোষের ক্ষয় ধীর হতে পারে, ফলে বার্ধক্যও পিছিয়ে যেতে পারে।

শরীরের কোষের ক্ষয়ের প্রক্রিয়া

শরীরের কোষগুলো সময়ের সঙ্গে ক্ষয় হয়, এবং এটি মানুষের শারীরিক বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত। সাধারণত, ৩০ বছর বয়সের পর থেকে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন হার্ট, লিভার, কিডনি, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করে। প্রতি দশ বছর অন্তর এই অঙ্গগুলির ক্ষমতা ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে কমে যায়। ফলে, ৫০ বছর বয়সে এসে আমরা দেখতে পাই যে, শরীরের অঙ্গগুলির ক্ষমতা প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে। ৮০ বছর বয়সে গিয়ে তা আরও অনেক বেশি হতে পারে।

টেলোমিয়ারের গুরুত্ব

শরীরের কোষগুলির ক্ষয়ের জন্য মূলত দায়ী একটি জিনগত উপাদান, যার নাম ক্রোমোজোম। ক্রোমোজোমের একে অপরের সঙ্গে যুক্ত দুটি বাহু থাকে, যার একটিকে বলা হয় টেলোমিয়ার। কোষ যখন বিভাজিত হয়, তখন এই টেলোমিয়ারের ক্ষয় ঘটে। টেলোমিয়ার ক্ষয়ের প্রক্রিয়া যদি ধীর হয়, তবে কোষের বিভাজন প্রক্রিয়া দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকে এবং কোষের মৃত্যু বিলম্বিত হয়।

গবেষকরা জানিয়েছেন, যদি আমরা রোজ ৩০ মিনিট দৌড়াই, তাহলে আমাদের শরীরের কোষের টেলোমিয়ারের ক্ষয় ধীর হবে, ফলে কোষের মৃত্যু বিলম্বিত হবে। এর ফলে শরীরের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দীর্ঘকাল সুস্থ থাকতে পারে এবং বার্ধক্যও অনেকটা পিছিয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়াটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘টেলোমিয়ার প্রিজ়ারভেশন’ বলা হয়।

গবেষণার ফলাফল

আমেরিকার ব্রিগাম ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই বিষয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণায় তারা দেখেছেন, রোজ মাত্র ৩০ মিনিট জগিং বা দৌড়ানো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে ডায়াবিটিসের ঝুঁকিও কমে যায়।

তারা আরও জানিয়েছেন, যদি সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট করে এই শরীরচর্চা করা হয়, তবে শরীরের কোষের ক্ষয় প্রক্রিয়া পিছিয়ে যেতে পারে, এবং মানুষের শারীরিক বয়সও অনেক কম হতে পারে।

শরীরচর্চার দীর্ঘমেয়াদী উপকারিতা

তবে, বার্ধক্য বিলম্বিত করার জন্য শুধু দৌড়ানোই একমাত্র উপায় নয়। যে কোনও ধরনের শরীরচর্চা, যেমন হাঁটাহাঁটি, সাইক্লিং, বা যোগব্যায়াম, এসবও শরীরের উপকারে আসে। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জগিং বা দৌড়ানো শরীরের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী হতে পারে।

শরীরচর্চা শুধু শারীরিক ফিটনেসই নয়, মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি মনের চাপ কমায়, উদ্বেগ হ্রাস করে এবং সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।

উপসংহার

রোজ মাত্র ৩০ মিনিটের শরীরচর্চা আপনার জীবনের মান উন্নত করতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে আপনি আপনার শরীরের কোষের ক্ষয় ধীর করে বার্ধক্যকে অনেকটা পিছিয়ে দিতে পারবেন। দৌড়ানো, হাঁটাহাঁটি বা অন্য কোনও শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া আপনার জীবনে কার্যকরী হতে পারে। তাই আজই শুরু করুন এবং শরীরকে সুস্থ রাখুন, যাতে আপনি দীর্ঘদিন ধরে জীবনের পূর্ণ আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।

ত্রিবেণী সঙ্গম থেকে পুণ্যার্থীদের সরাতে কঠোর পদক্ষেপ, ঘোড়সওয়ার পুলিশ নামাল যোগী সরকার

Read more

Local News