Monday, December 1, 2025

টাকা দিয়ে ভাড়া নেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ট্যাব কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার উত্তর দিনাজপুরের যুবক

Share

টাকা দিয়ে ভাড়া নেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট

নদিয়ার কালীগঞ্জ থানার পুলিশ ট্যাব কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে উত্তর দিনাজপুরের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। ধৃত ব্যক্তির নাম মোবারক হোসেন, বয়স ২৩। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের বাসিন্দা মোবারক ইতিমধ্যেই মালদহ জেলার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে ছিলেন। এবার তাঁকে ট্যাব কেলেঙ্কারি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নদিয়ার পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।

কীভাবে শুরু হয় এই ট্যাব কেলেঙ্কারি?


ট্যাব কেলেঙ্কারির গোটা পরিকল্পনার সূচনা উত্তর দিনাজপুর জেলা থেকে। ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের অধীনে স্কুলের পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, তা নিয়ে শুরু হয় অনিয়ম। নদিয়ার কালীগঞ্জ ব্লকের হাতগাছা পঞ্চায়েতের বসোরখোলা হাই স্কুলের ২০ জন ছাত্র-ছাত্রী তাঁদের ট্যাবের টাকা পাননি। অভিযোগ, সেই টাকা ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে তুলে নেওয়া হয়।

স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করে। তদন্তের পরে জানা যায়, এই টাকা বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছিল। সেই অ্যাকাউন্টগুলোর বেশিরভাগই অন্য জেলার।

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ভাড়া’ দেওয়ার ফাঁদ:


তদন্তে উঠে আসে যে মোবারক নামের ওই যুবক সামান্য টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়েছিলেন। সেই অ্যাকাউন্টগুলিতে প্রকল্পের টাকা পাঠানো হত, যা পরে তুলে নেওয়া হত। কত টাকার বিনিময়ে এসব অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, তা জানতে মোবারককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

পুলিশের পদক্ষেপ:


কালীগঞ্জ থানার পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মালিকদের চিহ্নিত করতে তাঁদের নোটিশ পাঠিয়ে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। সেখান থেকেই মোবারকের নাম সামনে আসে। জানা যায়, মোবারক এই পুরো প্রক্রিয়াটি সংগঠিত করেছিলেন। মালদহ জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ আগেই তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। এবার নদিয়ার কালীগঞ্জ থানার পুলিশ তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আরও তদন্ত চালাচ্ছে।

টাকা এখনও উদ্ধার হয়নি:


স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের পর চারজন পড়ুয়া তাঁদের ট্যাবের টাকা ফিরে পেয়েছেন। তবে বাকি ১৬ জনের টাকা এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। কালীগঞ্জ থানার পুলিশ তাদের টাকা উদ্ধার করার জন্য জোর তদন্ত চালাচ্ছে।

পুলিশের বক্তব্য:


কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার ঘোষ জানান, ‘‘এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে মালদহ জেলার পুলিশ এক যুবককে গ্রেফতার করেছিল। তাঁকে কালীগঞ্জ থানার পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’’

সাইবার অপরাধের নতুন রূপ:


এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট, সাইবার অপরাধীরা এখন নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। অল্প টাকার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ধরনের অপরাধ রুখতে পুলিশের সাইবার সেল আরও সক্রিয় হয়েছে। নদিয়া জেলার পুলিশ সাইবার অপরাধের বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে এবং মানুষকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

প্রতিরোধের পথে:


এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সাধারণ মানুষকে নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে হবে। অচেনা বা সন্দেহজনক লেনদেনের প্রস্তাব এড়িয়ে চলার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত কোনো সন্দেহ হলে তা পুলিশকে জানানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এই কেলেঙ্কারির তদন্ত এখনও চলছে, এবং পুলিশ আশা করছে যে শিগগিরই বাকি টাকাও উদ্ধার করা সম্ভব হবে। ট্যাব প্রকল্পের মতো সরকারি প্রকল্পের টাকা যাতে সঠিকভাবে কাজে লাগে, সে বিষয়ে আরও বেশি নজরদারির প্রয়োজনীয়তাও এই ঘটনার মাধ্যমে উঠে এসেছে।

Read more

Local News