Monday, December 8, 2025

গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজের বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কেবল আশ্বাস, বাস্তবে কার্যক্রম শ্লথ

Share

গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজের বেআইনি

কলকাতার গার্ডেনরিচ ও মেটিয়াবুরুজ এলাকায় বেআইনি নির্মাণের অভিযোগের সংখ্যা ১২৭টি, কিন্তু বাস্তবে ভাঙা হয়েছে মাত্র ২৭টি অবৈধ বাড়ি। পুরসভা ও প্রশাসনের কাছে বার বার এই বিষয়টি উত্থাপন হলেও, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তারা ব্যর্থ। নানা আশ্বাস দেওয়া হলেও, সেগুলো বাস্তবে কার্যকরী হতে দেখা যায় না।

পুরসভা থেকে দেওয়া আশ্বাসের অদৃশ্য বাস্তবতা


গার্ডেনরিচ ও মেটিয়াবুরুজ এলাকায় বেআইনি নির্মাণের বিরোধিতা ও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কলকাতা পুরসভা বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু, প্রাথমিক হিসাব বলছে, পুরসভা যতটা তৎপর থাকার দাবি করে, বাস্তবে তা সেভাবে কার্যকর হয়নি। ২০২৪ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১২৭টি বেআইনি নির্মাণের মধ্যে মাত্র ২৭টি ভাঙা হয়েছে।

গার্ডেনরিচ অঞ্চলের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে গত ১৭ মার্চ রাতে একটি বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ে ১৩ জনের মৃত্যু ঘটেছিল। ওই দুর্ঘটনার পর থেকে বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুরসভা বেশ কয়েকটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল এবং গঠন করেছিল স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)। এর পরেও, গার্ডেনরিচ ও মেটিয়াবুরুজ এলাকায় বেআইনি নির্মাণের প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হয়নি।

পুরসভার পদক্ষেপে বাধা ও রাজনৈতিক চাপ


গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়েও পুরকর্মীদের নানা বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিদের বাধার কারণে অনেক নির্মাণ ভাঙা যায়নি। গত সপ্তাহে, ১৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে বেআইনি বহুতল ভাঙতে গিয়েও স্থানীয় শাসক দলের পুরপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের বাধার মুখে পুরকর্মীরা ফিরে আসেন। অভিযোগ রয়েছে, শাসক দলের ওই প্রতিনিধিরা পুরকর্মীদের মারধরের হুমকি দিয়েছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেন।

এছাড়া, একাধিক ক্ষেত্রে, মহিলাদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে পুরকর্মীদের। বিশেষত, বেআইনি নির্মাণের মালিকরা নিজেদের স্বার্থে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন, যার ফলে ভাঙার কাজ আটকে যাচ্ছে। পুরকর্মীদের দাবি, বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে তাদের উপর রাজনৈতিক চাপ এবং মহিলাদের প্রতিবাদসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসে।

প্রশাসনিক উদাসীনতা ও অপ্রতুল মহিলা পুলিশ


গার্ডেনরিচ ও মেটিয়াবুরুজের অনেক জায়গাতেই বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশ না থাকার অভিযোগ উঠেছে। পুরকর্মীরা জানান, স্থানীয় মহিলাদের প্রতিবাদ এবং বাধা দেওয়ার কারণে ভাঙার কাজ থমকে যায়। কিছু ক্ষেত্রে, বেআইনি নির্মাণের মালিকরা আইনগত পদক্ষেপ নেন এবং আদালত পর্যন্ত বিষয়টি যায়, যার ফলে ভাঙার কাজ আটকে যায়।

পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, তারা নানান প্রতিবন্ধকতার মুখে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। একদিকে রাজনৈতিক চাপ, অন্যদিকে আইনি জটিলতা— এসব মিলিয়ে অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে পুরসভা অক্ষম হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ অবস্থা ও রাজনৈতিক চাপ


রাজনৈতিক চাপের কারণে অনেক সময় বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না। সজল ঘোষ, বিজেপি-র পুরপ্রতিনিধি, অভিযোগ করেছেন যে গার্ডেনরিচের বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত তথ্য লুকানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরসভা ও প্রশাসন দায়ী, কেননা ১৭ মার্চের দুর্ঘটনার পরেও অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করা যায়নি।’’

উপসংহার


গার্ডেনরিচ ও মেটিয়াবুরুজের বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে পুরসভা যেসব পদক্ষেপের কথা বলছে, সেগুলি বাস্তবে কার্যকরী হচ্ছে না। রাজনৈতিক চাপ, আইনি জটিলতা, এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বেআইনি নির্মাণ থামানো যাচ্ছে না। যদিও পুরসভা আশ্বাস দিয়ে বলছে, তারা সব সময় তৎপর রয়েছে, কিন্তু তা বাস্তব চিত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে না।

Read more

Local News