যশস্বী জয়সওয়াল এবং পৃথ্বী শ
ক্রিকেট বিশ্বে একটি সময় পৃথ্বী শ-কে নিয়ে বিপুল আশা ছিল, আর এখন সেই আস্থা অনেকটাই ক্ষয়প্রাপ্ত। অন্যদিকে, কোচ জ্বলা সিংহের আরেক ছাত্র যশস্বী জয়সওয়াল তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছেন। পৃথ্বী এবং যশস্বী, দুইজনের বয়সের ব্যবধান মাত্র দুই বছর, কিন্তু তাদের কেরিয়ার এবং পথ একেবারেই ভিন্ন দিকে এগোচ্ছে।
পৃথ্বী শ-এর পতন
২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে পৃথ্বী শ-এর পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। তার পরের বছরগুলিতে তাকে আইপিএল, রঞ্জি এবং জাতীয় দলের হয়ে খেলতে দেখা যায়। তবে সাদা বলের ক্রিকেটে তার ক্যারিয়ার থমকে গেছে। গত কয়েক বছরে তার পারফরম্যান্সে দেখা গেছে অবনতির চিহ্ন। আইপিএলের নিলামে এবার তাকে কোনো দল নেয়নি, মুম্বইয়ের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে তাকে বাদ পড়তে হয়েছে, এবং সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতেও তার রান নেই।
পৃথ্বী শ-এর মানসিকতার দিক থেকে কিছু পরিবর্তন এসেছে, যা তার কেরিয়ারকে বিপথে ঠেলে দিয়েছে। মাঠের বাইরে তার জীবন ঘিরে নানা বিতর্ক, যেমন তার ফিটনেসের অবস্থা এবং আউট অফ ফর্ম থাকার কারণে সমালোচনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি ২০২১ সালে ভারতীয় দলের অধিনায়ক রিকি পন্টিংও পৃথ্বী শ-কে নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন, কারণ তিনি অনুশীলনে অতিরিক্ত সময় কাটাতে রাজি হননি।
এর পাশাপাশি, ২০২৩ সালে পৃথ্বী শ-এর বিরুদ্ধে এক নেট প্রভাবীর সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগও ওঠে, যা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এর ফলে, তার ক্রিকেট কেরিয়ারের মধ্যে এক শূন্যতা দেখা দিয়েছে এবং মাঠের বাইরে অতিরিক্ত মনোযোগ তার খেলা থেকে সরে গিয়েছে বলে মনে করেন তার কোচ, জ্বলা সিংহ।
যশস্বী জয়সওয়ালের উত্থান
পৃথ্বী শ-এর বিপরীতে, যশস্বী জয়সওয়াল কোচ জ্বলা সিংহের কাছ থেকে ছোটবেলা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নিজের অবস্থান পাকা করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১৬১ রানের ইনিংস খেলে তিনি জাতীয় দল ও ক্রিকেট প্রেমীদের মন জয় করেছেন। যশস্বী তার খেলার প্রতি একাগ্রতা ও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নিজেকে এক তরুণ তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
যশস্বী জয়সওয়ালের খেলার প্রতি ভালোবাসা, মনোযোগ এবং কঠোর অনুশীলন তাকে ক্রিকেটের সেরা পর্যায়ে পৌঁছানোর পথ দেখাচ্ছে। কোচ জ্বলা সিংহ বলেন, “যশস্বী ক্রিকেট নিয়েই থাকে। শতরান করে দেড়শ বা দ্বিশতরান করার কথা ভাববে। রান না পেলে নেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটায়। তার এই মনঃসংযোগ এবং একাগ্রতা তাকে ভবিষ্যতে বড় তারকা হিসেবে গড়ে তুলবে।”
কোচের চোখে দুই ছাত্রের পার্থক্য
একই কোচের অধীনে পৃথ্বী শ এবং যশস্বী জয়সওয়ালের অনুশীলন এবং মানসিকতার মধ্যে বৈষম্য স্পষ্ট। পৃথ্বী শ, যিনি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে ঘিরে একসময় ভারতে ক্রিকেট বিশ্বের নজর কাড়েছিলেন, সেই তিনি এখন নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তার মধ্যে মনোযোগের অভাব এবং খেলার প্রতি আগ্রহের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, যশস্বী জয়সওয়ালের মধ্যে সেইসব গুণাবলী রয়েছে যা কোচ জ্বলা সিংহ খুঁজছেন।
কোচের মতে, পৃথ্বী শ অনেক সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু তিনি কখনোই তার পূর্ণ সম্ভাবনা অনুসরণ করেননি। “পৃথ্বীর মধ্যে প্রতিভা ছিল, কিন্তু সে মনোযোগ এবং খেলার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছে,” বলছেন জ্বলা। “যশস্বী তাকে ছাড়িয়ে গেছে, শুভমন গিল বা অভিষেক শর্মার মতো ক্রিকেটারদের সঙ্গে তুলনা করা যায়।”
ভবিষ্যত এবং সম্ভাবনা
যশস্বী জয়সওয়াল যদি তার বর্তমান ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন, তাহলে তার কাছে ভারতীয় দলে জায়গা পেতে সময় খুব বেশি লাগবে না। কোচ জ্বলা সিংহ তার প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেছেন এবং ভবিষ্যতে বড় তারকা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন। তবে পৃথ্বী শ-এর জন্য বিষয়টি একটু জটিল। তার বয়স মাত্র ২৫ বছর হলেও, তাকে আবার প্রমাণ করতে হবে যে সে আগের মতোই ফর্মে ফিরতে পারে। বর্তমানে, যশস্বী এবং শুভমন গিল তার চেয়ে অনেক এগিয়ে গিয়েছেন। পৃথ্বী শ-কে তার মনোভাব এবং খেলার প্রতি আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে হবে, তবেই তার জন্য ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তন সম্ভব।
এখন সবার নজর সেই পথেই রয়েছে, যেখানে পৃথ্বী শ এবং যশস্বী জয়সওয়াল দুইজনেই নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। একসময় যশস্বীও ছিলেন পৃথ্বীর মতোই, কিন্তু কোচের কাছে সঠিক পরামর্শ ও ত্যাগের মাধ্যমে তিনি যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন, তা ভবিষ্যতেও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

