Monday, December 1, 2025

কাজের ব্যস্ততায় দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকছেন? জানুন, হার্টের জন্য কতটা ক্ষতিকর এই অভ্যাস

Share

দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকছেন? হার্টের জন্য কতটা ক্ষতিকর এই অভ্যাস

অনেকেই সঠিক সময়ে খাওয়ার অভ্যাসে গাফিলতি করেন। সকালে তাড়াহুড়োয় প্রাতরাশ না করা, সারা দিন কাজের চাপে দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকা, এবং সন্ধ্যা গড়াতে টুকটাক জাঙ্ক ফুড খাওয়া—এই রুটিন যদি আপনারও হয়ে থাকে, তবে এখনই সতর্ক হওয়ার সময়। চিকিৎসকরা বলছেন, এই অভ্যাস শুধু স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে না, বরং হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে।

দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকার প্রভাব

হার্টের চিকিৎসক ড. দিলীপ কুমার জানাচ্ছেন, প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর কিছু না কিছু খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। একবারে বেশি খাওয়ার বদলে বারে বারে অল্প অল্প করে খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। দিনে ছয়টি খাবারের অংশ রাখা উচিত আপনার ডায়েটে। এর অন্যথা হলে শরীরে দেখা দিতে পারে নানান সমস্যা।

অনেক তরুণ-তরুণী ওজন কমানোর চেষ্টায় দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকেন বা অত্যন্ত কম খান। এতে শরীরের বিপাকক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীর শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রোটিন এবং ফ্যাটের উপর বেশি নির্ভর করতে শুরু করে, যা হৃৎপিণ্ডের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

শরীরের বিপাকক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া

খাবার জারিত হয়ে শরীরে শক্তি উৎপন্ন হয়। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকলে শরীরের বিকল্প প্রক্রিয়া শুরু হয়, যেখানে অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নিঃসরণ হয়। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। পাশাপাশি, হৃদ্‌যন্ত্রের উপরও এই প্রভাব পড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।

অফিসের জাঙ্ক ফুড অভ্যাস এবং প্রভাব

বর্তমান কর্মজীবী প্রজন্মের মধ্যে সাধারণ অভ্যাস হল চা বা কফি দিয়ে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখা। তারপর খিদে অত্যন্ত বেড়ে গেলে ভাজাভুজি বা জাঙ্ক ফুড খাওয়া। এর ফলে শরীরে প্রদাহ (ইনফ্ল্যামেশন) বৃদ্ধি পায়, এবং ক্যালোরি দহন বা “ডায়েট ইনডিউস্‌ড থার্মোজেনেসিস” ধীর হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

কিন্তু যদি সময় ধরে খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা যায়, তাহলে খাবার জারিত হয়ে প্রতিবারই ক্যালোরি পুড়বে, যা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

সুষম ডায়েটের গুরুত্ব

সঠিক সময়ে সুষম খাবার গ্রহণ হার্ট এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনার দৈনিক ডায়েট এমন হওয়া উচিত যা শক্তি জোগায় এবং শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

দিন শুরু করার জন্য উপযুক্ত খাবার:

  • ফলমূল (আপেল, কলা, কমলালেবু)
  • উপমা, ইডলি, পোহা
  • ফলের রস
  • দুধ ও কর্নফ্লেক্স

মধ্যাহ্নভোজ:

  • রুটি ও তরকারি
  • ভাত, ডাল, তরকারি, দই

রাতের খাবার:

  • রুটি বা ভাতের সঙ্গে তরকারি
  • এক টুকরো মাছ বা চিকেন

টিফিন বা কাজের ফাঁকে:

  • বাদাম (আখরোট, আমন্ড)
  • দই বা সেদ্ধ ছোলা
  • সয়া মিল্ক বা প্রোটিন শেক
  • মরসুমি ফলের ফ্রুট স্যালাড

হার্টের জন্য ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন

সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং সময়মতো খাওয়া হার্টের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। সময়ের অভাবে খাবার এড়িয়ে যাওয়া বা জাঙ্ক ফুডের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়া শরীরের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।

চিকিৎসকরা বলেন, হার্টের সুস্থতার জন্য জীবনযাত্রায় ভারসাম্য আনতে হবে। শুধু ব্যস্ততা নয়, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিয়ে খাবার খাওয়ার সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য নিজেকে সময় দিন এবং একটি পরিকল্পিত ডায়েট মেনে চলুন।

আপনার জীবনযাত্রা যদি খালি পেটে থাকার অভ্যাসে ভরা থাকে, তবে এখনই সেই অভ্যাস পরিবর্তন করার সময়। হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, সঠিক খাবার এবং সঠিক সময়ে খাবারই আপনার প্রধান প্রতিরক্ষা।

Read more

Local News