বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে মনঃসংযোগ হারাতে না চাইলে ফোন থেকে হোয়াট্সঅ্যাপই মুছে দিয়েছিলেন জেমাইমা
মেয়েদের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতকে জয়ের পথ দেখিয়েছিলেন জেমাইমা রদ্রিগেজ। গোটা প্রতিযোগিতায় যেখানে খুব বেশি উজ্জ্বল ছিলেন না, সেখানে এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে ফাইনালে তোলেন তিনি। সেই ম্যাচের পরই ঘটে অদ্ভুত এক ঘটনা—নিজের ফোন থেকে হোয়াট্সঅ্যাপই সরিয়ে দেন জেমাইমা। কেন এমন সিদ্ধান্ত? জানালেন নিজেই।
সেমিফাইনালের ইনিংসের পর হঠাৎই চারদিকে জেমাইমাকে নিয়ে উন্মাদনা শুরু হয়ে যায়। রাতারাতি তাঁর ফোনে বয়ে যায় শুভেচ্ছার বন্যা। জেমাইমার কথায়, “এমনভাবে ফোন বেজে যাচ্ছিল যে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। অচেনা লোক পর্যন্ত বার্তা পাঠাতে শুরু করেছিলেন। হোয়াট্সঅ্যাপে হাজারেরও বেশি মেসেজ জমে গিয়েছিল—একটুও বাড়িয়ে বলছি না!”
তিনি জানান, ম্যাচের আবেগ, উত্তেজনা সব মিলিয়ে মন ইতিমধ্যেই চাপে ছিল। তার ওপর ফাইনাল সামনে। এমন সময় এত ফোন আর বার্তা তাঁর মনঃসংযোগে বাধা দিচ্ছিল। সেই কারণেই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন তিনি—ফোন থেকে পুরোপুরি হোয়াট্সঅ্যাপ সরিয়ে দেওয়া।
জেমাইমা বলেন,
“আমাকে ফাইনালের প্রস্তুতি নিতে হত। ওই ইনিংস খেলেছি, দলকে জিতিয়েছি—সেটা ঠিক। কিন্তু বিশ্বকাপ তো তখনও বাকি! মনোযোগ ধরে রাখা জরুরি ছিল। তাই হোয়াট্সঅ্যাপ ডিলিট করি। খুব ঘনিষ্ঠ চার-পাঁচ জনকে সাধারণ বার্তা পাঠিয়ে বলেছিলাম, প্রয়োজন হলে ফোন বা এসএমএস করো।”
হোয়াট্সঅ্যাপ না খুললে বার্তা জমা হওয়ার শব্দে আরো বেশি বিরক্ত হচ্ছিলেন তিনি। ফলে অ্যাপ ডিলিট করাই ছিল শেষ উপায়।
ফাইনালের আগে সমাজমাধ্যম থেকেও দূরে ছিলেন জেমাইমা। তিনি জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়া কখনও কখনও অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে। সেই চাপ ফেলে রেখে মনোযোগী হতে চেয়েছিলেন।
ফাইনাল জেতার পরই আবার ফোনে ফিরে আসে হোয়াট্সঅ্যাপ। তখন ধৈর্য ধরে একে একে প্রত্যেক শুভেচ্ছাবার্তার উত্তর দেন জেমাইমা। সমর্থকদের ভালোবাসা তাঁকে অভিভূত করেছে। তাঁর কথায়,
“এখন তো ফোন খুললেই দেখি কেউ না কেউ আমার ইনিংস নিয়ে কথা বলছে। আমাদের জয়ের মুহূর্তগুলোও বারবার চোখে পড়ে। এই অনুভূতি দারুণ!”
ভারতের ঐতিহাসিক ফাইনালে ওঠার নেপথ্যে যে ইনিংসটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন, তা জেমাইমারই। আর সেই ইনিংসের ঠিক পরেই নিজের মনোযোগ, মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে তাঁর পেশাদারিত্বকেই আরও স্পষ্ট করে।
জেমাইমার এই অনন্য সিদ্ধান্ত একটাই মনে করিয়ে দেয়—সাফল্যের পর উচ্ছ্বাস যতই বাড়ুক, বড় মঞ্চে আসল লড়াইটা এখনও সামনে থাকে। আর সেটির জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ মন, শান্ত মাথা এবং শক্ত মানসিক প্রস্তুতি।

