স্বাস্থ্যকর প্রোটিন বার চেনার কৌশল!
প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে প্রোটিন বার এখন অনেকের কাছেই সহজ সমাধান। শরীরচর্চা করেন, ওজন বাড়াতে চান, বা সারাদিন বাইরে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়—এমন বহু মানুষ ব্যাগে একটি প্রোটিন বার রেখে চলেন। ক্ষুধা লাগলেই খেয়ে নেওয়া যায়, আর অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকেও দূরে থাকা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হল—যে প্রোটিন বারটি খাচ্ছেন, তা আদৌ সত্যিই স্বাস্থ্যকর তো? না কি চটজলদি পুষ্টির আড়ালে ঢুকে পড়ছে অতিরিক্ত চিনি, কৃত্রিম মিষ্টি বা অযথা ফ্যাট?
আজকাল বিজ্ঞাপন বা সোশ্যাল মিডিয়া দেখেই অনেকেই এ ধরনের বার কিনে ফেলছেন, অথচ তার উপাদান বা পুষ্টিমূল্য সম্পর্কে তেমন ধারণাই থাকে না। পুষ্টিবিদদের মতে, সঠিক বার বেছে না নিলে ওজন ঘোড়ার মতো বেড়ে যেতে পারে, বাড়তে পারে ডায়াবিটিস বা কোলেস্টেরলের ঝুঁকিও। তাই কিনতে গেলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা দরকার।
প্রোটিন বার আদৌ কেন জনপ্রিয়?
ব্যস্ত জীবনে নিয়মিত খাবার খাওয়ার সময় অনেকেই পান না। বিশেষ করে যারা অফিস, শুটিং, ভ্রমণ বা অনিয়মিত সময়ের কাজে যুক্ত—তাঁদের কাছে এটি দ্রুত খাওয়ার মতো এক সহজ বিকল্প। তেলে ভাজা খাবারের বদলে প্রোটিন বার খেলে অন্তত বাইরে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। পাশাপাশি, যাঁরা ‘হাই ইনটেনসিটি ওয়ার্কআউট’ করেন, তাঁদের জন্য অতিরিক্ত প্রোটিন সরবরাহে বার কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারে।
তবে বাজারচলতি প্রতিটি প্রোটিন বার যে আপনার জন্য উপকারী—তা মোটেও নয়। অনেক সময় ‘হেলদি’ বলে বিক্রি হওয়া বারের মধ্যে থাকে অতিরিক্ত রিফাইন্ড সুগার, হাই-ফ্রুকটোজ সিরাপ, পাম অয়েল বা কৃত্রিম ফ্লেভার। তাই লেবেল পড়ে সঠিক বার বেছে নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রোটিন বার কেনার আগে নজরে রাখুন ৭টি বিষয়
১. বারটিতে কমপক্ষে ১০–১৫ গ্রাম প্রোটিন আছে কি না
একটি গুণগত মানসম্পন্ন প্রোটিন বারে সাধারণত এই পরিমাণ প্রোটিন থাকা উচিত। এর কম থাকলে সেটি ‘প্রোটিন বার’ নয়, বরং স্রেফ একটি সাধারণ স্ন্যাকস।
২. চিনির পরিমাণ ৫ গ্রাম বা তার কম
বেশির ভাগ বারে ‘নো অ্যাডেড সুগার’ লেখা থাকে, কিন্তু তা সত্যি নাও হতে পারে। তাই লেবেল দেখে নিশ্চিত হন। বেশি চিনি মানেই ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবিটিস এবং ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি।
৩. অন্তত ৩ গ্রাম ফাইবার রয়েছে কি না
ফাইবার থাকলে বারটি বেশি সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, হজমেও ভালো।
৪. কৃত্রিম মিষ্টি বা সিন্থেটিক সুইটনার আছে কি না
সুক্রোলোজ, অ্যাসপারটেম, মালটিটল—এ ধরনের উপাদান থাকলে দীর্ঘমেয়াদে পেটের সমস্যা বা মেটাবলিক গোলমাল হতে পারে।
৫. বাদাম, বীজ বা স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের উপস্থিতি
আলমন্ড, আখরোট, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড—এগুলো থাকলে বারটি বেশি পুষ্টিকর হয়।
৬. অতিরিক্ত রাসায়নিক বা প্রিজারভেটিভ আছে কি না
অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত বার নিয়মিত খাওয়া একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়।
৭. উপাদান তালিকা ছোট এবং সহজবোধ্য কি না
যত বেশি উপাদান, তত বেশি প্রসেসড। স্বাস্থ্যকর বারের তালিকা সাধারণত ছোট হয়।
বাড়িতে তৈরি বারই সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প
বাজারচলতি অনেক বারের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে চিনি ও অপ্রয়োজনীয় তেল। তাই স্বাস্থ্য সচেতনরা চাইলে ঘরেই তৈরি করতে পারেন—
- গুড়-বাদামের লাড্ডু
- ওটস-গুড় গ্র্যানোলা বার
- তিল-তিসির বার
এগুলো সহজে বানানো যায়, পুষ্টিকর এবং সবচেয়ে বড় কথা—শতভাগ ভেজালমুক্ত।
শেষ কথা
প্রোটিন বার খারাপ নয়, তবে সব বার সবার জন্য নয়। কিনতে গেলে শুধু বিজ্ঞাপন দেখে নয়—বরং পুষ্টিগুণ বিচার করেই কিনুন। আর সন্দেহ হলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। স্বাস্থ্য রক্ষায় সতর্ক থাকাই সবচেয়ে বড় প্রোটিন!

