🩸 “রক্ত থামে না কেন?” — হিমোফিলিয়া নিয়ে ভয় আর ভুল ধারণা দূর করুন আজই!

হিমোফিলিয়া নিয়ে ভয় আর ভুল ধারণা !

একটা ছোট কাটা কিংবা সামান্য চোটে রক্তপাত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি সেই রক্ত একটু সময় পরেও বন্ধ না হয়, তাহলে সেটি হতে পারে এক ভয়ঙ্কর রোগের লক্ষণ— যার নাম হিমোফিলিয়া। এই রোগে আক্রান্ত মানুষদের রক্ত জমাট বাঁধতে চায় না, ফলে আঘাতের জায়গা থেকে দীর্ঘ সময় ধরে রক্ত ঝরতেই থাকে। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, পুরুষেরাই এই রোগে বেশি ভোগেন!

🧬 হিমোফিলিয়া কী?

শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রয়োজন কিছু বিশেষ ধরনের প্রোটিন, যাদের বলে ‘ক্লটিং ফ্যাক্টর’। এই প্রোটিনগুলোর মধ্যে ফ্যাক্টর ৮ ও ফ্যাক্টর ৯ গুরুত্বপূর্ণ। যাদের শরীরে এগুলোর ঘাটতি থাকে, তাদের রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। ফলে সামান্য চোটেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, এমনকি শরীরের ভিতরেও (যেমন— অস্থিসন্ধি বা মস্তিষ্কে) রক্তপাত শুরু হতে পারে।

এই পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে— স্ট্রোক হতে পারে, কেউ কেউ চলে যেতে পারেন কোমায়। হিমোফিলিয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় একটি ‘রেড ব্লাড ডিজঅর্ডার’, এবং এটি একটি বিরল রোগ।

👨‍🦰 পুরুষেরাই কেন বেশি আক্রান্ত?

এই রোগের উৎস রয়েছে জিনে, আর এই জিনটি থাকে এক্স ক্রোমোজোমে। পুরুষদের শরীরে থাকে একটি এক্স ও একটি ওয়াই ক্রোমোজোম। আর মহিলাদের শরীরে থাকে দুটি এক্স ক্রোমোজোম।
যদি পুরুষের একমাত্র এক্স ক্রোমোজোমে ত্রুটি থাকে, তখন সেই ত্রুটির প্রভাব পড়ে সরাসরি। কারণ বিকল্প কোনো সুস্থ এক্স ক্রোমোজোম তার নেই।
কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে একটিতে সমস্যা হলেও অন্যটি সেই ত্রুটিকে প্রতিহত করতে পারে। ফলে পুরুষদের মধ্যে রোগের লক্ষণ বেশি দেখা যায় এবং ঝুঁকিও বেশি থাকে।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, হিমোফিলিয়ার বাহক মূলত নারীরাই, কারণ সন্তান জন্মের সময় ত্রুটিপূর্ণ জিন মায়ের শরীর থেকে সন্তানের মধ্যে স্থানান্তরিত হতে পারে।

🏥 উপযুক্ত চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

হিমোফিলিয়া আজ আর এমন এক রোগ নয় যার কোনো চিকিৎসা নেই। এখন নানা রকম ক্লটিং ফ্যাক্টর থেরাপি বা জিন থেরাপি-র মাধ্যমে রোগীদের সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। তবে রোগটি যদি প্রথম পর্যায়েই ধরা না পড়ে, তাহলে তা বিপজ্জনক রূপ নিতে পারে।

🔍 সাবধানতা এবং সচেতনতা জরুরি

• কারও শরীরে অস্বাভাবিক রক্তপাত হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
• পারিবারিক ইতিহাস থাকলে নবজাতকের জন্মের সময় থেকেই জিন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
• রক্তপাত বা চোটের পর শরীরের ভিতরে ব্যথা বা ফোলা দেখা দিলে দেরি না করে হাসপাতালে যান।

শেষ কথা:
হিমোফিলিয়া একটি বিরল কিন্তু গুরুতর রোগ। পুরুষদের মধ্যে এর প্রকোপ বেশি হলেও, সময়মতো ধরা পড়লে এটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ভয় নয়, সচেতনতাই হোক আমাদের হাতিয়ার! 🧬🩸

পুরুষের ত্বকে ক্যানসারের ঝুঁকি ৫০% বেশি! সানস্ক্রিন মাখছেন ঠিকঠাক?