জল খেলে ওজন বাড়ে?
আমরা সবাই জানি, জল শরীরের জন্য অপরিহার্য। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, জলও ওজন বাড়াতে পারে?
হয়তো প্রতিদিন শরীরচর্চা করছেন, খাবারের ক্যালোরি হিসেব করে খাচ্ছেন, কিন্তু ওজন মাপার যন্ত্রে সেভাবে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে না। এটির কারণ হতে পারে ‘ওয়াটার ওয়েট’ বা শরীরে অতিরিক্ত জল জমে যাওয়া।
কিন্তু জল খাওয়া কি সত্যিই ওজন বাড়ায়? নাকি অন্য কোনো কারণে শরীরে পানি ধরে রাখার প্রবণতা বাড়ে? আসুন জেনে নিই ‘ওয়াটার ওয়েট’ কী এবং কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করবেন।
🔹 ‘ওয়াটার ওয়েট’ কী?
আমাদের শরীরের ৬০-৭০% অংশ জল দিয়ে তৈরি। কিন্তু কখনও কখনও শরীর প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জল ধরে রাখে, যার ফলে ওজন বেড়ে যায়। এই অবস্থাকেই ‘ওয়াটার রিটেনশন’ বা ‘ওয়াটার ওয়েট’ বলা হয়।
এটি মূলত শরীরের টিস্যু ও অস্থিসন্ধিতে (জয়েন্ট) অতিরিক্ত জল জমে থাকার কারণে হয়। সাধারণত, এটি কিডনি, হরমোন, খাবারের ধরন এবং জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করে।
🔹 ‘ওয়াটার ওয়েট’ হওয়ার কারণ
✅ অতিরিক্ত নুন খাওয়া:
খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকলে শরীর অতিরিক্ত জল ধরে রাখে, যা ওজন বাড়িয়ে দেয়। প্রসেসড ফুড, ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার বা অতিরিক্ত নুন দেওয়া খাবার খেলে ‘ওয়াটার ওয়েট’ বেড়ে যেতে পারে।
✅ হরমোনের ওঠানামা:
বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের (পিরিয়ডের) আগে-পরে হরমোনের তারতম্যের কারণে শরীরে অতিরিক্ত জল জমতে পারে।
✅ কিডনি, লিভার বা হার্টের সমস্যা:
এই অঙ্গগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ব্যাহত হলে শরীর থেকে বাড়তি জল বের হতে পারে না, ফলে তা জমে যায়।
✅ কম জল পান করা:
অবিশ্বাস্য শোনালেও, পর্যাপ্ত পরিমাণ জল না খেলে শরীর মনে করে, এটি পানির সংকটে পড়েছে, তাই তা ধরে রাখে।
✅ অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া:
কার্বোহাইড্রেট বেশি খেলে শরীরে গ্লাইকোজেন জমা হয়, যা জল ধরে রাখে। ১ গ্রাম গ্লাইকোজেন প্রায় ৩-৪ গ্রাম জল ধরে রাখতে পারে! ফলে বেশি কার্বোহাইড্রেট খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
✅ অ্যাকটিভ না থাকা:
বেশি সময় বসে থাকলে রক্ত সঞ্চালন কমে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে জল জমে যায়।
🔹 ‘ওয়াটার ওয়েট’ কমানোর সহজ উপায়
🥗 ১) খাবারে নুন কমান:
👉 অতিরিক্ত সোডিয়ামযুক্ত খাবার (চিপস, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার) এড়িয়ে চলুন।
👉 রান্নার সময় নুন কম ব্যবহার করুন এবং খাবারের স্বাদ বাড়াতে লেবুর রস বা ভিনিগার ব্যবহার করুন।
🚰 ২) পর্যাপ্ত জল পান করুন:
👉 প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন।
👉 বেশি জল পান করলে দেহে জমে থাকা টক্সিন বের হয়ে যায় এবং কিডনি সঠিকভাবে কাজ করে।
🏋️♂️ ৩) নিয়মিত শরীরচর্চা করুন:
👉 হালকা ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি বা যোগব্যায়াম করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বের হয়।
👉 ঘাম এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর নিজেই পানি ধরে রাখার প্রবণতা কমায়।
🍌 ৪) পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান:
👉 পটাশিয়াম শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখে এবং বাড়তি জল শরীর থেকে বের করে দেয়।
👉 কলা, টমেটো, পালংশাক, আলু, ডাবের জল পটাশিয়ামের ভালো উৎস।
🥦 ৫) কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে প্রোটিন বাড়ান:
👉 সাদা চালের বদলে ব্রাউন রাইস বা ওটস খান।
👉 চিনি ও ময়দা কমিয়ে শাকসবজি, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খান।
🧘♀️ ৬) স্ট্রেস কমান:
👉 অতিরিক্ত মানসিক চাপ কোর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা শরীরে জল ধরে রাখার প্রবণতা বাড়ায়।
👉 নিয়মিত মেডিটেশন বা ধ্যান করলে স্ট্রেস কমবে।
🔹 তাহলে জল কি সত্যিই ওজন বাড়ায়?
❌ না! জল ওজন বাড়ায় না বরং শরীরকে ডিটক্স করে এবং বিপাকক্রিয়া সচল রাখে।
✅ তবে অতিরিক্ত নুন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা শরীরে জল জমিয়ে ওজন বাড়াতে পারে।
📌 পর্যাপ্ত জল পান, সুষম খাবার গ্রহণ ও নিয়মিত শরীরচর্চাই ‘ওয়াটার ওয়েট’ কমানোর মূল চাবিকাঠি।
👉 তাই, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে জলকে নয়, বরং জীবনযাপনকে দোষ দিন!
‘প্যাক-ফ্যাক’ থেকে ‘আমার আইপ্যাক’— কেন বদলে গেল মমতার অবস্থান?

