Tuesday, February 25, 2025

শ্বাসের গতি বলবে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য! নতুন গবেষণায় অ্যালঝাইমার্স চিহ্নিত করার সহজ উপায়

Share

শ্বাসের গতি বলবে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য!

মানুষের গড় আয়ু যত বাড়ছে, স্মৃতিভ্রংশের মতো সমস্যাও তত বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে অ্যালঝাইমার্স, যা একবার হলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ব্যক্তির চিন্তাভাবনা, স্মরণশক্তি এবং দৈনন্দিন কাজের দক্ষতা হ্রাস করে। এখনো পর্যন্ত এই রোগের নিরাময়ের কোনো কার্যকর ওষুধ পাওয়া যায়নি, কিন্তু যদি আগেভাগেই শনাক্ত করা যায়, তবে কিছুটা হলেও রোগের অগ্রগতি ধীর করা সম্ভব।

এই নিরীক্ষার পথেই এক নতুন আশার আলো দেখাচ্ছেন ব্রিটেন ও স্লোভেনিয়ার বিজ্ঞানীরা। তাঁদের সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে, শুধু শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বিশ্লেষণ করেই চিহ্নিত করা যেতে পারে অ্যালঝাইমার্স!


🔬 কী বলছে গবেষণা?

ব্রিটেনের ল্যাঙ্কাস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা ১৯ জন অ্যালঝাইমার্স রোগী এবং ২০ জন সুস্থ ব্যক্তির ওপর গবেষণা চালান। তাঁরা দেখেছেন—
অ্যালঝাইমার্স রোগীদের শ্বাসপ্রশ্বাসের হার প্রতি মিনিটে গড়ে ১৭ বার।
সুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে শ্বাসের হার প্রতি মিনিটে ১৩ বার।

গবেষকদের মতে, অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্তদের শ্বাসের হার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি হয়ে যায়।

এর কারণ হলো, এই রোগে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহের ঘাটতি হয়। যার ফলে শরীর স্বাভাবিক অক্সিজেন গ্রহণের জন্য বেশি দ্রুত শ্বাস নেয়।


🧠 কী ভাবে শ্বাসের হার আর মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত?

ব্রিটিশ নিউরোলজিস্ট অ্যানেটা স্টেফানোভাস্কা ব্যাখ্যা করেছেন—
মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ ও অক্সিজেন সরবরাহের উপর নির্ভর করে শ্বাসের গতি।
অ্যালঝাইমার্সের রোগীদের ক্ষেত্রে এই রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়, যার ফলে শরীর স্বাভাবিক অক্সিজেন গ্রহণের জন্য বেশি দ্রুত শ্বাস নেয়।
স্নায়ুকোষ ও রক্তজালকের মধ্যে বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে, যা ক্ষতিগ্রস্ত হলেই শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বদলে যায়।

এটাই বোঝার জন্য গবেষকেরা সহজ অথচ কার্যকর পদ্ধতি খুঁজছেন, যাতে রক্তের নমুনা বা জটিল পরীক্ষার প্রয়োজন ছাড়াই শুধু শ্বাসের হার দেখেই রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।


⚕️ ভবিষ্যতে এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর হতে পারে?

বর্তমানে অ্যালঝাইমার্স নির্ণয়ের জন্য মস্তিষ্ক স্ক্যান, রক্ত পরীক্ষা কিংবা মেমোরি টেস্টের প্রয়োজন হয়, যা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। যদি শ্বাসের গতি পর্যবেক্ষণ করেই প্রাথমিক ভাবে এই রোগ চিহ্নিত করা যায়, তবে তা হবে—
একটি দ্রুত, সহজ এবং ব্যথাহীন পদ্ধতি।
প্রাথমিক পর্যায়েই রোগ শনাক্তকরণের সুযোগ বাড়বে।
উপযুক্ত চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে রোগের অগ্রগতি ধীর করা সম্ভব হবে।

গবেষকদের মতে, এখনও পর্যন্ত পরীক্ষাটি সীমিত সংখ্যক মানুষের উপর করা হয়েছে। আরও বৃহৎ আকারে এই গবেষণা হলে এটি বাস্তবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।


🌿 অ্যালঝাইমার্স প্রতিরোধে কী করা যায়?

যদিও এই রোগের নিরাময় এখনো পাওয়া যায়নি, তবে কিছু অভ্যাস মেনে চললে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে—
নিয়মিত ব্যায়াম করা – এতে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ঠিক থাকে।
সুষম খাদ্যগ্রহণ – অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন বাদাম, ফল, ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ খাওয়া উপকারী।
স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্ক সচল রাখতে ধাঁধা বা নতুন কিছু শেখার অভ্যাস করা।
ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে দূরে থাকা।


🔚 উপসংহার

এই গবেষণা নিউরোলজি জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। যদি সত্যিই শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বিশ্লেষণ করে অ্যালঝাইমার্স শনাক্ত করা সম্ভব হয়, তবে ভবিষ্যতে রোগ নির্ণয় আরও সহজ ও সুলভ হয়ে উঠবে।

এই গবেষণা সফল হলে অ্যালঝাইমার্স নির্ণয়ের জটিলতা অনেকটাই কমবে, এবং বহু মানুষের জীবন আরও সহজ হবে। স্মৃতিভ্রংশের ছায়া এড়াতে হয়তো শিগগিরই মিলবে সহজ সমাধান!

শুরুতেই ছন্দহীন শামি, এক ওভারে ১১ বল! বুমরাহের রেকর্ড ভাঙলেন বাংলার পেসার

Read more

Local News