গভীর সমুদ্রের অন্ধকার ফাঁস!
গভীর সমুদ্রের অতল অন্ধকারে যেসব রহস্যময় প্রাণীরা বসবাস করে, তারা সাধারণত মানুষের দৃষ্টির বাইরে থাকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সেই চিত্র পাল্টাচ্ছে। একের পর এক অদ্ভুতদর্শন সামুদ্রিক প্রাণী উঠে আসছে সমুদ্রপৃষ্ঠে। ‘ব্ল্যাক সি ডেভিল’ (হাম্পব্যাক অ্যাংলারফিশ) থেকে শুরু করে ‘ডুমসডে ফিশ’ (অরফিশ)— এদের আকস্মিকভাবে দেখা মিলছে উপকূলের কাছাকাছি। কিন্তু কেন? বিজ্ঞানীরা এই রহস্যের উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত।
সমুদ্রের অতল থেকে উঠে এল ‘শয়তানের মাছ’
কিছুদিন আগেই স্পেনের টেনেরিফে দ্বীপের কাছে দেখা গিয়েছে ভয়ঙ্কর চেহারার একটি মাছ। এটি হাম্পব্যাক অ্যাংলারফিশ, যা বেশি পরিচিত ‘ব্ল্যাক সি ডেভিল’ নামে। সাধারণত ৫০০ থেকে ৪৫০০ মিটার গভীরে থাকা এই প্রাণীকে সচরাচর সমুদ্রপৃষ্ঠে দেখা যায় না। কিন্তু ২০১৪ সালের পর এবার ফের দেখা মিলল এই মাছের।
🟠 অ্যাংলারফিশ দেখতে কেমন?
🔹 এই মাছটি দেখতে কুচকুচে কালো, মাথার উপর শুঁড়ের মতো অংশ, ধারালো দাঁত, আর বড় বড় ঘোলাটে চোখ।
🔹 শুঁড় থেকে আলোকিত বস্তু বের হয়, যা শিকারকে আকর্ষণ করে।
🔹 স্ত্রী অ্যাংলারফিশ পুরুষের তুলনায় অনেক বড় হয় এবং গভীর সমুদ্রের খাদ্যশৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সমুদ্রের অতল থেকে উঠে আসছে রহস্যময় প্রাণীরা
শুধু অ্যাংলারফিশই নয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক গভীর সমুদ্রের প্রাণী উপরে উঠে আসতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ‘ডুমসডে ফিশ’ নামে পরিচিত অরফিশ।
🟠 কেন অরফিশকে ‘ডুমসডে ফিশ’ বলা হয়?
🔹 জাপানের লোককথা অনুযায়ী, অরফিশ যখন সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে আসে, তখন বড় কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা থাকে।
🔹 ২০১১ সালে জাপানে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের আগে ২০টিরও বেশি অরফিশ ভেসে উঠেছিল উপকূলে।
🔹 ২০১৭ সালে ফিলিপিন্স ও ক্যালিফোর্নিয়ায় দেখা মিলেছিল এই মাছের।
এছাড়াও যে সমস্ত গভীর সমুদ্রের প্রাণীরা উঠে এসেছে—
✅ গবলিন হাঙর: হাজার মিটার গভীরে থাকা এই হাঙরটির চোয়াল বিশাল এবং চেহারা রীতিমতো ভৌতিক।
✅ স্টিজিওমেডুসা গিগান্টিয়া (দৈত্যাকার জেলিফিশ): ১০ মিটার লম্বা ফিতের মতো বাহু বিশিষ্ট বিরল প্রজাতির এই জেলিফিশকে ২০২২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সমুদ্র উপকূলে দেখা গিয়েছিল।
✅ ফ্রিল্ড হাঙর: এই হাঙরকে ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ বলা হয়, কারণ এটি প্রায় ৮০ মিলিয়ন বছর ধরে বিবর্তন ছাড়াই টিকে আছে।
কেন বার বার গভীর সমুদ্রের প্রাণীরা উঠে আসছে?
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এর পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে—
🟠 ভূমিকম্প ও টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া
🔹 গভীর সমুদ্রের প্রাণীরা সমুদ্রের ভূমিকম্পের আগাম সংকেত পায়।
🔹 যখন টেকটোনিক প্লেট নড়ে ওঠে, তখন গভীর সমুদ্রের চাপ বদলে যায়, ফলে এই প্রাণীরা উপরের দিকে উঠে আসে।
🟠 জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণায়ন
🔹 বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সমুদ্রের গভীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমছে।
🔹 টিকে থাকার জন্য গভীর সমুদ্রের প্রাণীরা বাধ্য হয়ে ওপরে চলে আসছে।
🟠 মানবসৃষ্ট দূষণ
🔹 গভীর সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্য, রাসায়নিক পদার্থ এবং খনিজ তেল ছড়িয়ে পড়ছে, যা এই প্রাণীদের বাস্তুতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করছে।
এই প্রাণীদের উঠে আসা কি বড় বিপদের ইঙ্গিত?
এই প্রাণীদের সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে আসা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত অরফিশের উপস্থিতি ভূমিকম্প বা সুনামির সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে। তবে এর সত্যতা নিয়ে গবেষণা চলছে।
এক সময় মানুষের কাছে অজানা ছিল সমুদ্রের অতল গহ্বরের রহস্য। কিন্তু এখন সেই রহস্য একে একে খুলছে। প্রশ্ন হল— এই রহস্য উন্মোচন কি নতুন বিপদের বার্তা, নাকি প্রকৃতির স্বাভাবিক পরিবর্তনেরই এক অংশ? সময়ই দেবে উত্তর!
রবিবার মহারণ: ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথে কোন লড়াইয়ে নজর থাকবে সবচেয়ে বেশি?