Monday, December 1, 2025

থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ মঠে ৭৩টি মৃতদেহ ও ৬০০ কুমির: রহস্যজনক ঘটনা প্রকাশ্যে

Share

থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ মঠে

থাইল্যান্ডের একটি বৌদ্ধ মঠে ৭৩টি মৃতদেহ ও ৬০০ কুমিরের সন্ধান পাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দেশব্যাপী। মধ্য থাইল্যান্ডের ফিচিট প্রদেশে অবস্থিত থিফাকসং পা সাংনায়াথাম মঠে পুলিশ একটি অভিযান চালানোর পর এই ভীতিকর ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। মৃতদেহগুলির সঙ্গেই মঠের ভিতরে পুকুরে পোষা কুমিরগুলির উপস্থিতি রহস্য আরও জটিল করে তোলে। কীভাবে এতগুলি মৃতদেহ এই মঠে পৌঁছেছিল এবং কুমিরগুলি কেন পোষা হয়েছিল, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২২ নভেম্বর মঠের ভিতর থেকে ৪১টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মঠটি প্রায় ১৬০০ বর্গ মিটার এলাকায় বিস্তৃত এবং এটি ঘন জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, মঠটি মূলত আধ্যাত্মিক চর্চার জন্য পরিচিত, যেখানে ভিক্ষুরা বিভিন্ন ধ্যান এবং উপাসনা করতেন। তবে, মৃতদেহগুলির উপস্থিতি এবং কুমিরের উপস্থিতি এমন এক রহস্যের জন্ম দেয়, যা এখনও অন解ূদ্ধ।

পুলিশের তদন্তে জানা গেছে যে, মৃতদেহগুলির অধিকাংশই বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিবারের সদস্যদের। মঠের ভিক্ষুরা দাবি করেছেন যে, অনেক সময় মৃত ব্যক্তির পরিবারের লোকেরা তাদের আত্মীয়দের মঠে রেখে যেতে চেয়েছিলেন। তারা বলেন, মৃত্যুর পরেও পরিবার চায় তাদের নিকট থেকে মুক্তি না পেয়ে আত্মীয়রা মঠে আশ্রয় নিতেন। তবে, এ দাবি সঠিক কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মঠের প্রধান ভিক্ষু ফ্রা আজান সাই ফন পান্ডিতোর দাবি, এই মৃতদেহগুলি ভিক্ষুদের ‘মৃত্যুভয়ের প্রশিক্ষণ’ দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো। পান্ডিতোর মতে, সন্ন্যাসীদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতি এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই মৃতদেহগুলির সামনে ধ্যান করা হতো। তিনি বলেন, এই পদ্ধতি ভিক্ষুদের মৃত্যুভয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য ব্যবহৃত হতো, যা তাদের আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যেত। এমনকি, তিনি এই পদ্ধতিকে নিজের উদ্ভাবন বলে দাবি করেছেন। তবে, তার দাবি পুলিশে বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি এবং মৃতদেহগুলো বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়।

এদিকে, মঠের ভিতরে ৬০০ কুমিরের উপস্থিতি আরও বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে। পুলিশ জানায়, মঠের চারটি বড় পুকুরের মধ্যে কুমিরগুলো ছাড়া ছিল। দর্শনার্থীরা এই কুমিরগুলিকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে দেখার অনুমতি পেতেন। কিন্তু, কুমির পোষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা মঠ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কেন এই বিপুল পরিমাণ কুমির পোষা হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে মৃতদেহের সম্পর্ক কী?

এই ঘটনায় মঠের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে মৃতদেহগুলির পরিচয় এবং সেগুলির উত্স সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি একটি অস্বাভাবিক ও অপ্রচলিত ধর্মীয় অনুশীলন, যা অনেকেই গ্রহণ করতে পারে না।

এই রহস্যময় ঘটনা থাইল্যান্ডের ধর্মীয় দুনিয়ার গোপন দিকগুলোকে সামনে এনে দিয়েছে। যদিও মঠের প্রধান ভিক্ষুর দাবি রয়েছে, কিন্তু পুলিশ তদন্তের পরেই এ ধরনের কার্যকলাপের প্রকৃত কারণ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এই ঘটনা যে শুধু থাইল্যান্ডে, বরং আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত হয়েছে, তা স্পষ্ট।

Read more

Local News