বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সন্ন্যাসীদের গ্রেফতার
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের পর আরও দুই সন্ন্যাসীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে চট্টগ্রামের জেলে চিন্ময়কৃষ্ণকে খাবার এবং ওষুধ দিতে গিয়ে আটক হন রুদ্রপ্রতি কেশব দাস এবং রঙ্গনাথ শ্যামসুন্দর দাস। তাঁরা প্রবর্তক সংঘের সদস্য। পুলিশের দাবি, চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্তের অংশ হিসেবেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতার এবং নতুন ঘটনা
চিন্ময়কৃষ্ণ দাস, যিনি সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে সক্রিয় ছিলেন, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গত সোমবার গ্রেফতার হন। তাঁর গ্রেফতারের পর থেকেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে উদ্বেগ এবং ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন এলাকায় তাঁর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এসব বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
শনিবার রাতে রুদ্রপ্রতি কেশব দাস এবং রঙ্গনাথ শ্যামসুন্দর দাস জেলে চিন্ময়কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে খাবার ও কিছু টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে জেল থেকে ফেরার পথে পুলিশ তাঁদের আটক করে এবং পরে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়।
প্রবর্তক সংঘের প্রতিক্রিয়া
প্রবর্তক সংঘের প্রিন্সিপাল স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস জানান, তাঁদের দুই সদস্যের আটক হওয়ার খবর ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, “ওঁরা জানিয়েছিলেন যে কোতোয়ালি থানায় আটক থাকার পর তাঁদের জেলে পাঠানো হয়েছে।”
ইসকনের উদ্বেগ
ইসকনের কলকাতা মুখপাত্র রাধারমণ দাস এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘চিন্ময়কৃষ্ণের পর আরও দুই নির্দোষ সন্ন্যাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর এই ধরনের অত্যাচার মর্মান্তিক।’’ তিনি আরও দাবি করেন যে বাংলাদেশ সরকার ইসকনকে ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত
চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পর থেকেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। চট্টগ্রাম ও রংপুরে সংখ্যালঘুরা বিক্ষোভে অংশ নেন। বিক্ষোভ দমনে পুলিশের কঠোর পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। এদিকে, ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশ হাই কোর্টে একটি আবেদন জমা পড়ে, যদিও আদালত সেই আবেদন খারিজ করে।
ভারতের উদ্বেগ
বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে নয়াদিল্লি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং তাঁদের অধিকার হরণের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। কলকাতাতেও ইসকনের সদস্য এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করছে।
সংখ্যালঘুদের জন্য বাড়ছে চাপ
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার এবং নির্যাতনের অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছে। চিন্ময়কৃষ্ণ দাস দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করেছেন। কিন্তু তাঁর গ্রেফতারির পর দেখা যাচ্ছে, সেই লড়াই আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে সংখ্যালঘুদের জন্য পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

