Thursday, May 8, 2025

২৬ হাজার চাকরির ভবিষ্যৎ: সুপ্রিম কোর্টের রায় কি নতুন আশার আলো দেখাবে?

Share

২৬ হাজার চাকরির ভবিষ্যৎ কি?

পশ্চিমবঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ২৬ হাজার চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে দীর্ঘ অনিশ্চয়তা কাটতে চলেছে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট এই সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণা করতে চলেছে। কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের পর রাজ্য সরকার এবং চাকরি হারানো হাজার হাজার প্রার্থী সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। দীর্ঘ শুনানির পর অবশেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

কী নিয়ে এই মামলা?

২০১৬ সালের এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন মহলে দাবি ওঠে, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যোগ্য প্রার্থীদের পরিবর্তে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা হাই কোর্ট সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াটিই বাতিল করে দেয়, ফলে চাকরি হারান ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক।

রাজ্য সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। ফেব্রুয়ারি মাসে শীর্ষ আদালত এই মামলার শুনানি শেষ করে রায় স্থগিত রেখেছিল। অবশেষে বুধবার ঘোষণা করা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ এই মামলার চূড়ান্ত রায় দেবে।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন: যোগ্যদের কী হবে?

এই মামলার অন্যতম জটিলতা হলো, যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের পৃথক করার পদ্ধতি। হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে এবং যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই বাদ গেছেন। কিন্তু আসল ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) খুঁজে না পাওয়ায়, কে যোগ্য আর কে অযোগ্য, তা নির্ধারণ করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণে জানায়, “আসল তথ্য পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ ওএমআর শিট সংরক্ষণ করা হয়নি। তাহলে কোন শিটকে আসল বলে ধরা হবে?”

এসএসসি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল যে, তাদের কাছে ‘র‌্যাঙ্ক জাম্প’ এবং প্যানেল-বহির্ভূত নিয়োগের তথ্য রয়েছে, তবে ওএমআর শিট কারচুপির প্রমাণ নেই। অন্যদিকে, সিবিআই তাদের তদন্তে জানিয়েছে, বহু প্রার্থী সাদা খাতা জমা দিয়েও চাকরি পেয়েছেন, যা নিয়োগ দুর্নীতির প্রকট প্রমাণ।

রাজ্য সরকারের যুক্তি: শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে

এই রায়ের প্রভাব রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার উপর কতটা পড়বে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। রাজ্য সরকারের দাবি, একসঙ্গে এত শিক্ষক বরখাস্ত হলে স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই সুপ্রিম কোর্টের কাছে তারা আবেদন করেছে, অন্তত যোগ্য প্রার্থীদের যেন চাকরিতে বহাল রাখা হয়।

হাই কোর্টের কড়া অবস্থান

এর আগে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, “যাঁরা মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেলে ছিলেন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের চাকরি বাতিলের পাশাপাশি ততদিন পাওয়া বেতনও ফেরত দিতে হবে।” আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ সুদ-সহ পুরো বেতন ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় হাজার হাজার প্রার্থী

এই রায়ের জন্য প্রায় ২৬ হাজার চাকরিপ্রাপ্ত ব্যক্তি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ইতোমধ্যেই বছরের পর বছর শিক্ষকতা করছেন, কেউ বা ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে মানসিক চাপে ভুগছেন। চাকরি হারানো প্রার্থীরাও চাইছেন, যারা অন্যায়ভাবে চাকরি পেয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হোক।

এর আগে সুপ্রিম কোর্ট চাকরি বাতিলে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবারের রায়ই ঠিক করবে, এই শিক্ষকরা চাকরি ফিরে পাবেন, নাকি রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড়সড় সংকট তৈরি হবে।

সকলের চোখ এখন সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের দিকে!

ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণার অপেক্ষায় বিশ্ব, ভারতের চিন্তা বাড়ছে!

Read more

Local News