আজকাল অনেকেরই একটা চল আছে—সপ্তাহে ছয় দিন যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং এক দিন ‘চিট ডে’ রাখা। সেই একদিন ভাজাভুজি, ফাস্টফুড খেয়ে মনের আনন্দটা যেন পুরোদমে নেওয়া যায়। কিন্তু এই এক দিনের ছোট্ট ‘চিট’ কি সত্যিই নিরাপদ? সাময়িক আনন্দের আড়ালে কি আমরা নিজের শরীরের বিশেষ করে পেটের কোনো ক্ষতি করে ফেলছি?
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, এক দিনের বেশি ফ্যাট যুক্ত খাবার খাওয়াও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেকেই ভাবেন, ছয় দিন ঠিকঠাক খেলে এক দিন মজাদার খাবার খাওয়া যাবে, এতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু বিজ্ঞান অন্য কথা বলছে।
গবেষণার তথ্য কী বলছে?
‘ইমিউনিটি’ নামে একটি মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র একদিনও বেশি ফ্যাট যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পাকস্থলীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফ্যাট অতিরিক্ত মাত্রায় পাকস্থলীর ভিতরে থাকা রোগ প্রতিরোধী কোষগুলোর ক্ষতি করতে পারে। ফলে দীর্ঘ সময় পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এই গবেষণা অস্ট্রেলিয়ার দুই গবেষক সিরিল সিলেট এবং এলাইজা হলের নেতৃত্বে করা হয়। তারা বলছেন, “যত বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার খাওয়া হয়, শরীরে তত বেশি প্রদাহ তৈরি হয়। শরীরে এই প্রদাহ অনেক সময় লক্ষণহীন থাকলেও, এক পর্যায়ে মারাত্মক রকমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।”
ফ্যাটের ক্ষতিকর প্রভাব
গবেষণায় জানা গিয়েছে, যখন ডায়েটে ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন ‘আইএলসিথ্রিএস’ নামে একটি রোগ প্রতিরোধী কোষের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এই কোষগুলো শরীরকে জীবাণু এবং ক্ষতিকারক উপাদান থেকে রক্ষা করে থাকে। যখন এই কোষ দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন পাকস্থলীর ভেতর ‘আইএল ২২’ নামের প্রোটিনের উৎপাদন কমে যায়, যা স্বাভাবিকভাবে পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে।
ফ্যাটের অতিরিক্ত গ্রহণে এই সুরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং পাকস্থলী দুর্বল হয়ে নানা রকম গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
‘চিট ডে’র প্রভাব আমাদের শরীরে
গবেষণায় ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যারা বেশি ফ্যাট যুক্ত খাবার খেয়েছে তাদের পরিপাকতন্ত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই বুঝা যায়, আমাদের ‘সাপ্তাহিক চিট ডে’ আসলে শরীরের জন্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে।
বিশ্বের অনেক দেশে যেখানে ফাস্টফুডের ব্যবহার বেশি, সেখানে গ্যাস্ট্রিক এবং অন্যান্য পাকস্থলীর রোগের হারও বেশি। অপরদিকে, যারা সুষম এবং নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করে, তাদের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা তুলনামূলক কম।
কী করবেন?
স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মধ্যে মাঝে মাঝে একটু খেয়াল রাখা দরকার। শুধুমাত্র একদিনের জন্য নয়, সারাজীবন সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া উচিত। ‘চিট ডে’ থাকা মানে হচ্ছে শরীরের ওপর একটা বিরাট প্রভাব ফেলা। তাই যতটা সম্ভব ফ্যাট এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে আনুন।
সারাদিনের খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এই ছোট ছোট অভ্যাস বদলে ফেললেই পেট এবং শরীর থাকবে দীর্ঘদিন সুস্থ ও শক্তিশালী।
সুতরাং, সপ্তাহে একদিন ‘চিট ডে’ মানেই পেটের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই আনন্দের একদিনের জন্য শরীরকে খারাপ করার বদলে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্যের প্রতি সচেতন হওয়াই হবে ভালো। শরীর তো একটাই!
কান চলচ্চিত্র উৎসবে ঘোমটা ঢাকা জাহ্নবী! লাল গালিচায় মা শ্রীদেবীর ছায়া যেন ফিরল মেয়ে রূপে

