সাত বছর পর ফের স্তন ক্যানসার!
অভিনেতা আয়ুষ্মান খুরানার স্ত্রী ও লেখিকা তাহিরা কাশ্যপ ফের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। সাত বছর আগে এই রোগকে হার মানিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার আবার সেই কর্কট রোগ ফিরে এসেছে—এ যেন ক্যানসার রোগীদের কাছে এক কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হওয়ার উদাহরণ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ক্যানসার কি সত্যিই পুরোপুরি সারে? কত বছর পর তা ফিরে আসতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় সেরে গেলেও তা আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা থেকেই যায়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স থেকে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, রোগমুক্তির ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যেই প্রায় ২৫ শতাংশ রোগীর মধ্যে ক্যানসার ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে। কখনও একই স্তনে, কখনও অন্য স্তনে—আবার কখনও তা শরীরের অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।
কেন ফিরে আসে স্তন ক্যানসার?
চিকিৎসকদের মতে, ক্যানসার ফিরে আসা নির্ভর করে বেশ কিছু জিনগত এবং শারীরবৃত্তীয় কারণের উপর। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, ক্যানসার সাধারণত তিনটি জায়গায় ফিরে আসে—
- যেখান থেকে প্রথমে ক্যানসার শুরু হয়েছিল
- তার আশেপাশের অংশে
- শরীরের অন্য কোনও অঙ্গে, রক্ত বা লসিকানালীর মাধ্যমে ছড়িয়ে
এই ফিরে আসাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় ‘মেটাস্ট্যাটিক ডেভেলপমেন্ট’।
বিশেষ কিছু জিনে (যেমন TP53, PIK3CA, ESR1) পরিবর্তন হলে ক্যানসারের ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই রোগমুক্তির পরও নিয়মিত জিনগত স্ক্রিনিং ও পর্যবেক্ষণ জরুরি।
কারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?
বিশেষ করে ‘ট্রিপল নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যানসার’ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে। এই ধরনের ক্যানসারে রোগ ফিরে আসার সম্ভাবনা ২৫-৩২ শতাংশ। ক্যানসার চিকিৎসক ডাঃ শুভদীপ চক্রবর্তী বলেন, “চিকিৎসা চলাকালীন যেসব ক্যানসার কোষ ধ্বংস হয় না, সেগুলি থেকেই ফের অনিয়মিত কোষবিভাজন শুরু হতে পারে।”
কোন লক্ষণে সতর্ক হবেন?
দ্বিতীয়বার ক্যানসার ফিরে এলে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন—
- স্তনে ব্যথা
- স্তনের গঠন বা আকারে পরিবর্তন
- সর্দি-কাশি ছাড়াই শ্বাসকষ্ট
- স্নায়ুর সমস্যা, মাথাব্যথা, এমনকি দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়লে রোগ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই উপরের যেকোনও উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
তাহিরার লড়াই আমাদের কী শেখায়?
তাহিরা কাশ্যপের মতো একজন সংগ্রামী নারী ফের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ায় যেমন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তেমনই তাঁর সাহস ও ইতিবাচক মনোভাব অনেকের অনুপ্রেরণা। ক্যানসারকে শুধুই একটি চিকিৎসা-যোগ্য রোগ হিসেবে না দেখে, একে একটি দীর্ঘমেয়াদি লড়াই হিসেবে মানতেই হবে।
রোগ সেরে গেলেও, নিয়মিত চেক-আপ, জিনগত পরীক্ষা এবং সচেতনতা—এই তিনটি অস্ত্রই হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য ঢাল। কারণ ক্যানসার হয়তো ফিরে আসতে পারে, কিন্তু মানসিক দৃঢ়তা ও সময়োচিত চিকিৎসা হলে, জয় সম্ভব।
পুরুষের ত্বকে ক্যানসারের ঝুঁকি ৫০% বেশি! সানস্ক্রিন মাখছেন ঠিকঠাক?