কাকলির সঙ্গে দূরত্বের নীতিতে তৃণমূল!
তৃণমূল কংগ্রেসের সিদ্ধান্তে সাম্প্রতিক রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন সেন দম্পতি। দলের প্রাক্তন সাংসদ এবং চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেনকে সাসপেন্ড করার পর তাঁর কাউন্সিলর স্ত্রী কাকলি সেনের রাজনৈতিক অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও তৃণমূল দলীয় নেতৃত্ব সাসপেনশনের পথে না গিয়ে আপাতত কাকলির সঙ্গে ‘নিরাপদ দূরত্ব’ বজায় রাখার কৌশল নিয়েছে।
শান্তনুর সাসপেনশন ও প্রশ্নের ঝড়
শুক্রবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তে সাসপেন্ড করা হয় শান্তনু সেনকে। সাসপেনশনের কারণ হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে দলবিরোধী কাজের অভিযোগ আনা হলেও, শান্তনু দাবি করেছেন, তাঁকে জানানো হয়নি তাঁর অপরাধ ঠিক কী। শান্তনুর ভাষায়, “আমাকে কী কাজের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। এমনকি সাসপেনশনের মেয়াদ কতদিন, তাও জানানো হয়নি।’’
বিরোধী শিবির ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের উপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেছে। শাসক দলের একাংশ আশঙ্কা করছে, এই বিতর্ককে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক জলঘোলা করতে পারে বিরোধীরা।
কাকলি সেন: দলের নির্দেশে চললেও পরিস্থিতি জটিল
শান্তনুর সাসপেনশনের পরে তাঁর স্ত্রী কাকলি সেনের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। কলকাতা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কাকলি স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি এখনও দলের সঙ্গেই আছেন। কাকলি বলেন, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথে চলেছি। তাঁর দেওয়া টিকিটেই কাউন্সিলর হয়েছি। তাই দলের নির্দেশ মেনেই কাজ করব।’’
তবে তিনি এও জানান, “আমি আমার স্বামীর পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব। কিন্তু তাঁর পাশে থাকা মানে দলের বিরোধিতা করা নয়।’’ কাকলি অভিযোগ করেছেন, গত ছ’মাসে দলীয় কাউন্সিলরদের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে তাঁকে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনও উদ্যোগ হয়নি।
শান্তনু ও কাকলির প্রতিবাদী ভূমিকা
২০২৪ সালের আগস্ট মাসে আরজি কর হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়েছিল। সেই সময় সেন দম্পতি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন। তাঁদের কন্যাসন্তানকেও প্রতিবাদে অংশ নিতে দেখা যায়। শান্তনু আরজি কর হাসপাতালের দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। এর পরেই তাঁকে দলের মুখপাত্রের পদ থেকে সরানো হয় এবং কাকলিকে দলীয় হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ থেকেও বাদ দেওয়া হয়।
দলীয় নেতৃত্বের দূরত্ব নীতি
তৃণমূলের একাংশ মনে করছে, শান্তনুকে সাসপেন্ড করার মাধ্যমে দল ইতিমধ্যেই সেন দম্পতির কাছে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। তবে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি এড়াতে কাকলিকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া হয়নি।
এক দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আপাতত কাকলির কার্যক্রমের উপর নজরদারি রাখা হবে। একইসঙ্গে কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরদের কাকলির সঙ্গে ‘দূরত্ব বজায় রেখে চলার’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টির ভবিষ্যৎ রাজনীতি
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের এমন কৌশল সেন দম্পতিকে ঘিরে রাজনীতির জটিলতা বাড়িয়েছে। বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে শাসক দলের উপর চাপ বাড়ানোর সুযোগ খুঁজছে। একইসঙ্গে দলের অভ্যন্তরেও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কাকলি সেনের মন্তব্য, “আমার স্বামী সাসপেন্ড হলেও আমি দলের সদস্য। দল যে নির্দেশ দেবে, তা মেনেই কাজ করব।’’ তবে দলে তাঁর অবস্থান ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
উপসংহার
সেন দম্পতিকে ঘিরে তৈরি এই বিতর্ক তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জটিলতাকে আরও উন্মোচিত করেছে। শান্তনুর সাসপেনশন ও কাকলির রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে দলের কৌশল পরিস্থিতি সামাল দিতে কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
Read More: বাড়ির লাগোয়া জমিতে সবজি বাগান করতে চান? বীজ পোঁতার আগে মনে রাখুন এই ৫টি বিষয়