Friday, January 31, 2025

শাক-সব্জি দিয়ে তৈরি সবুজ রস: রোজ খেলে স্বাস্থ্য ভালো হবে, না কি উল্টো ফল?

Share

শাক-সব্জি দিয়ে তৈরি সবুজ রস

শরীর থেকে টক্সিন দূর করার জন্য অনেকেই এখন ঘরে তৈরি সবুজ রস বা ‘গ্রিন জুস’-এর উপর ভরসা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা নানা রিল দেখে অনেকেই শাকপাতা, টাটকা সব্জি আর সবুজ ফল দিয়ে এই পানীয় বানাচ্ছেন এবং রোজ তা খাওয়ার অভ্যাস করছেন। এমন পানীয় যে ভিটামিন এবং খনিজে ভরপুর, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এ কথা কি সত্যি যে রোজ এই পানীয় পান করা শরীরের জন্য উপকারী? নাকি এতে উল্টো ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ে?

এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন পুষ্টিবিদ শালিনী সুধাকর। তাঁর মতে, গ্রিন জুস যতটা উপকারী বলে মনে হয়, ঠিক ততটাই ক্ষতিকর হতে পারে, যদি নিয়ম মেনে এবং সঠিক পদ্ধতিতে এটি তৈরি না করা হয়।

কাঁচা শাকপাতায় লুকিয়ে ক্ষতির আশঙ্কা

শালিনী সুধাকর জানিয়েছেন, সবুজ রসের পুষ্টিগুণ অনেকটাই নির্ভর করে এটি তৈরির পদ্ধতির উপর। তিনি বলেন, “যদি কেউ এই রস তৈরি করতে গিয়ে একেবারে কাঁচা শাকপাতা ব্যবহার করেন, তবে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।”

কারণ? কাঁচা শাকপাতায় যেমন অনেক পুষ্টিগুণ থাকে, তেমনই থাকে কিছু ক্ষতিকর উপাদান। বিশেষ করে, অক্সালেট নামক একটি ‘অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট’, যা শরীরে ভিটামিন এবং খনিজ শোষণে বাধা দেয়। অক্সালেট অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরে জমলে তা লিভার এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

শাক-সব্জি

রান্না করলে কি শাকপাতার পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়?

অনেকে মনে করেন, শাকপাতা রান্না করলে তার পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। পুষ্টিবিদ শালিনীর মতে, এই ধারণা একেবারে ভুল না হলেও পুরোপুরি ঠিকও নয়। শাক রান্না করার সময় সঠিক তাপমাত্রায় এবং উপযুক্ত উপকরণ দিয়ে তা প্রস্তুত করা হলে বরং শাকপাতার পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়।

তবে রস তৈরির ক্ষেত্রে শাকপাতা সম্পূর্ণ সেদ্ধ করার দরকার নেই। এর পরিবর্তে শাকপাতাকে সামান্য নুন জলে হালকা ভাপিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতে শাকের ক্ষতিকর উপাদান যেমন দূর হবে, তেমনই প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণও বজায় থাকবে।

সবুজ রস খাওয়ার সঠিক নিয়ম কী?

গ্রিন জুস খাওয়া স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হতে পারে, তবে তা রোজ খাওয়া উচিত নয়। শালিনী সুধাকর জানিয়েছেন, সপ্তাহে তিন দিন এই রস খাওয়া যেতে পারে। এর বেশি খেলে শরীরে অতিরিক্ত অক্সালেট জমার আশঙ্কা থাকে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।

সপ্তাহে তিন দিন খাওয়ার ফলে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে, কিন্তু ক্ষতিকর উপাদান জমে থাকার ঝুঁকি থাকবে না।

সবুজ রসের উপকারিতা ও সতর্কতা

সবুজ রস যে একাধিক ভিটামিন এবং খনিজের উৎস, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। বিশেষ করে এতে থাকে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ভিটামিন সি-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি। এটি হজম ক্ষমতা বাড়াতে, ত্বক উজ্জ্বল করতে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।

তবে অতিরিক্ত মাত্রায় এই পানীয় খেলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে। শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অক্সালেট জমলে তা কিডনির জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং পাথর হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়। পাশাপাশি, লিভারের কার্যক্ষমতাও কমতে পারে।

কিছু ব্যবহারিক টিপস

১. রেসিপি অনুযায়ী তৈরি করুন
শাকপাতা, ফল বা সব্জি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। টাটকা এবং কীটনাশকমুক্ত উপাদান ব্যবহার করুন।

২. ভাপিয়ে ব্যবহার করুন
কাঁচা শাকপাতা ব্যবহার না করে হালকা ভাপানো শাকপাতা ব্যবহার করুন। এতে পুষ্টি বজায় থাকবে, আবার ক্ষতিকর উপাদান দূর হবে।

৩. পরিমিতি বজায় রাখুন
সপ্তাহে তিন দিন বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রিন জুস খান। নিয়মিত পান করলে শরীরের প্রতিক্রিয়া খেয়াল করুন।

৪. মিশ্রণ বিবেচনা করুন
সবুজ রসে একাধিক উপাদান মেশান। শুধু শাকপাতা নয়, তাজা ফল, লেবুর রস বা আদা যোগ করুন, যা স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ বাড়াবে।

শেষ কথা

গ্রিন জুস শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী হতে পারে, তবে তা খাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলা জরুরি। রোজ গ্রিন জুস খাওয়ার আগে জেনে নিন এটি কীভাবে তৈরি করা উচিত এবং শরীরের জন্য তা কতটা প্রাসঙ্গিক। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তখনই কাজে লাগে, যখন তা সঠিক নিয়মে করা হয়। অতএব, গ্রিন জুস পান করুন, তবে পরিমিতি এবং সতর্কতার সঙ্গে।

মহাকুম্ভের ‘মোনালিসা’র খ্যাতি নিয়ে বিরক্তি! কেন বললেন, ‘দিনভর ছবি তুলতে ব্যস্ত’?

Read more

Local News