Friday, March 21, 2025

রাজ্যের চারটি প্রকল্পে উপভোক্তা বাড়ানোর ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

Share

চারটি প্রকল্পে উপভোক্তা বাড়ানোর ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চারটি প্রধান সামাজিক প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এই পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিধবা ভাতা, বিশেষ ভাবে সক্ষমদের ভাতা, এবং বাংলার বাড়ি প্রকল্প। কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ বন্ধ থাকার মাঝেও রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।

বাংলার বাড়ি প্রকল্পে নতুন দিশা

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পূর্বে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে যেসব উপভোক্তা টাকা পাননি, তাদের জন্য রাজ্য নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করবে। ১৫-৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম কিস্তি হিসেবে ১২ লক্ষ উপভোক্তা টাকা পেতে শুরু করবেন। প্রতিজন উপভোক্তা দুই কিস্তিতে মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাবেন। এর মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত আরও ১ লক্ষ মানুষ অন্তর্ভুক্ত হবেন।

প্রকল্পের নতুন নাম ‘বাংলার বাড়ি’ দেওয়ার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যেহেতু রাজ্যের তহবিল থেকে এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে, তাই প্রকল্পের নামও রাজ্যের হবে।” তিনি আরও জানান, পরবর্তী পর্যায়ে আরও ২৪ লক্ষ উপভোক্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং তাদের জন্যও দফায় দফায় অর্থ বরাদ্দ করা হবে।

লক্ষ্মীর ভান্ডারে ৫ লক্ষ নতুন উপভোক্তা

লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের জনপ্রিয়তা বাড়াতে আরও ৫ লক্ষ ৭ হাজার নতুন উপভোক্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রকল্পে মহিলারা আজীবন মাসিক ভাতা পাবেন। নতুন উপভোক্তাদের জন্য রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৬২৫ কোটি টাকা। বর্তমানে লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপভোক্তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২.২১ কোটিতে, যেখানে সরকারের মোট ব্যয় প্রায় ৪৮ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই প্রকল্পে কোনো কঠিন শর্ত রাখা হয়নি, ফলে যে কোনো পরিবারের মহিলারা সহজেই এর সুবিধা নিতে পারবেন।

বিধবা ভাতা এবং বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য উদ্যোগ

বিধবা ভাতা প্রকল্পেও নতুন করে ৪৩ হাজার ৯০০ জন উপভোক্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে এই প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা ২০ লক্ষ ৩২ হাজার, যা নতুন অন্তর্ভুক্তির পরে আরও বাড়বে। একইভাবে, বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য ভাতা প্রকল্পে আরও ১৯ হাজার নতুন উপভোক্তাকে যুক্ত করা হয়েছে। এই উদ্যোগে রাজ্যের খরচ বাড়লেও, সরকার জানিয়েছে যে সামাজিক সুরক্ষার জন্য এই ব্যয় আবশ্যক।

কৃষকবন্ধু প্রকল্পেও বরাদ্দ বৃদ্ধি

কৃষকবন্ধু প্রকল্পে রাজ্য সরকার একটি কিস্তিতে ১.০৮ কোটি উপভোক্তার জন্য ২৯৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য ২০১৯ সাল থেকে ২১ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। কৃষকদের মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১.২৭ লক্ষ পরিবারকে ২৫৪৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সমালোচনা

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জোর দিয়ে বলেন, “আমি যা প্রতিশ্রুতি দিই, তা রাখি।” তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আয়ের নির্দিষ্ট সীমা ছাড়া এত ব্যাপক পরিসরে প্রকল্প চালানো সরকারের জন্য আর্থিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের অভাবে রাজ্যের ওপর চাপ আরও বাড়তে পারে।

এই সিদ্ধান্তগুলি রাজ্যের দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। তবে, অর্থনৈতিক টেকসইতা নিশ্চিত করার জন্য ভবিষ্যতে একটি পর্যালোচনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

Read more

Local News