Saturday, February 22, 2025

মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব ও স্বাস্থ্য পরিষেবা: নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

Share

মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব

মানসিক স্বাস্থ্য এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে। কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক জীবন, সম্পর্ক— সব কিছুতেই নানা কারণে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে, অথচ এই বিষয়টি প্রায়ই অবহেলিত থাকে। শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো মানসিক স্বাস্থ্যকেও সমান গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা এখন পুরোদমে আলোচনায় আসছে। সম্প্রতি, যাদবপুরের সিএসআইআর-ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজির জে সি রায় প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত একটি আলোচনাসভার মাধ্যমে এই বিষয়টির উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

সোম এবং মঙ্গলবার, দুই দিনব্যাপী এই আলোচনা সভায় সিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীরা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রয়োজনীয় দৃষ্টি নিবদ্ধ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাদের বক্তব্য, শারীরিক স্বাস্থ্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যও সমান গুরুত্বের দাবি রাখে, তবে আজও অনেক ক্ষেত্রে এই বিষয়টি অবহেলিত। কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ, পারিবারিক চাপ, সামাজিক অস্থিরতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। কিন্তু, এই সমস্যাগুলো ঠিকমতো চিহ্নিত বা সমাধান করা হয় না, যা মানুষের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তোলে।

এ প্রসঙ্গে সিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীরা জানান, তারা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য বিভিন্ন গবেষণা চালাচ্ছেন। তারা মনে করেন, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির সূচনা ও তার পরবর্তী প্রতিকার নিয়ে সঠিক গবেষণা প্রয়োজন। পাশাপাশি, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি সঠিক সমন্বয়ের অভাবও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রায়শই গবেষণার ফলাফলগুলো শিল্প সংস্থাগুলির কাছে পৌঁছাতে পারে না, ফলে গবেষণার ফলগুলি প্রয়োগে আনা সম্ভব হয় না। এই ফাঁকটি পূরণের জন্য সিএসআইআর এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।

সিএসআইআর-এর ডিরেক্টর জেনারেল এল কালাইসেলভি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন এবং বিভিন্ন শিল্প সংস্থার কর্মকর্তারা এই আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে সিনিয়র বিজ্ঞানী কৃষ্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা যে গবেষণা করি, তার প্রভাব প্রতিফলিত করার জন্য আমাদেরকে শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে আরও বেশি সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করতে হবে।”

তবে, শুধুমাত্র গবেষণা ও উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকেই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। এর জন্য আরও ব্যাপক সচেতনতা এবং একটি শক্তিশালী নীতি প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্র, সমাজ এবং ব্যক্তি স্তরে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিকল্পনা এবং নীতির মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার উপর বিশেষ জোর দেওয়া দরকার।

পাশাপাশি, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা ও সহযোগিতার সুযোগও নিশ্চিত করা উচিত। এক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল এবং অন্যান্য সামাজিক সংগঠনগুলোকে সহযোগিতা প্রদান করা যেতে পারে। এতে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে, এবং এর ফলে কর্মক্ষমতা ও জীবনের মান আরও উন্নত হবে।

এই আলোচনাসভায় আরও এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে, সেটা হল— মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতি এবং সেই নীতির ভিত্তিতে পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় স্থাপন। এটি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রসারের ক্ষেত্রে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো গবেষণার ফলাফল শুধু পুস্তক বা পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, তা মাঠপর্যায়ে প্রয়োগের জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিতে হবে।

অতএব, মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে, এবং আমাদের সমাজে একে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, মানসিক স্বাস্থ্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করে। স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কিত উন্নয়ন এবং গবেষণার মাধ্যমে আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারি এবং একটি সুস্থ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো।

Read more

Local News