‘সুদর্শন চক্র’ লাগানো ফৌজি বিমান দেখিয়ে চমকাচ্ছে চিন
নিজস্ব প্রযুক্তিতে একের পর এক অত্যাধুনিক হাতিয়ার প্রকাশ করে বায়ুসেনার শক্তি প্রদর্শন চালিয়ে যাচ্ছে বেজিং। ষষ্ঠ প্রজন্মের লড়াকু জেটের পর এবার রাডার সমৃদ্ধ মালবাহী বিমান উন্মোচন করে নজর কেড়েছে তারা। চিনের এই পদক্ষেপে চাপে পড়েছে আমেরিকা ও ভারত।
২০২৫ সালের শুরুতেই ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’ (পিএলএ) তাদের নতুন প্রজন্মের কৌশলগত বিমান, ‘কেজে-৩০০০’, উন্মোচন করেছে। বিমানটির পিছনে রয়েছে বিশাল এক গোলাকৃতি রাডার, যা দেখতে অনেকটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সুদর্শন চক্রের মতো।
এই ধরনের বিমানকে বলা হয় ‘এয়ারবোর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল এয়ারক্রাফ্ট’। এটি ৩৬০ ডিগ্রিতে শত্রুপক্ষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। এই বিমানের রাডার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বেজিংয়ের জেনারেলদের আগাম পরিকল্পনা ও প্রতিরোধে সাহায্য করবে।

‘গ্লোবাল টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, কেজে-৩০০০ সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এটি ‘ওয়াই-২০’ কৌশলগত মালবাহী বিমানের একটি উন্নত সংস্করণ। বিমানটির মূল বৈশিষ্ট্য হল, এটি দীর্ঘক্ষণ আকাশে থাকতে সক্ষম এবং মাঝ আকাশে জ্বালানি ভরার সুবিধাও রয়েছে। ফলে দীর্ঘ সময়ের নজরদারি ও অভিযানে এটি কার্যকর।
বিমানটিতে রয়েছে দুটি ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রনিক অ্যারে রাডার, যা দক্ষিণ চিন সাগর ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের উপর নজরদারির জন্য তৈরি। আগে থেকেই চিনা সেনার হাতে রাডার সমৃদ্ধ কেজে-৫০০ এবং কেজে-২০০০ মডেলের বিমান ছিল। তবে নতুন মডেলটি আরও উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি।
বেজিংয়ের এই কৌশলগত পদক্ষেপ শুধু প্রতিরক্ষার জন্য নয়। এটি তাইওয়ান এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রভাব বিস্তারেরও একটি প্রচেষ্টা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, কেজে-৩০০০-এর ব্যবহার আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দিতে পারে।
এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘জে-৩৬’ প্রকাশ্যে এনেছিল চিন। বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত এই বিমানটি রাডারে ধরা পড়ে না। এতে রয়েছে টার্বোফ্যান ইঞ্জিন এবং লেজবিহীন নকশা। আমেরিকার ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান এখনও গবেষণা পর্যায়ে থাকায়, চিন এই মডেল উন্মোচনের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, চিনের ‘জে-৩৬’ এবং ‘কেজে-৩০০০’ আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাইওয়ান দখলের পরিকল্পনা হোক বা লাদাখের বিতর্কিত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চিন তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে কৌশলগত আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে।
চিনের এই উদ্যোগে শুধু নয়াদিল্লি নয়, ওয়াশিংটনও উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে, দক্ষিণ চিন সাগর এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের উপর নজরদারির ক্ষেত্রে কেজে-৩০০০ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ানোর পাশাপাশি সামরিক প্রতিযোগিতা আরও তীব্র করবে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা।
চিনের এই নতুন অস্ত্রাগার তাই ভবিষ্যৎ সংঘর্ষের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাইওয়ান হোক বা লাদাখ, দুই ক্ষেত্রেই সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে চিনা শক্তি প্রদর্শনের মোকাবিলায় ভারত ও আমেরিকাকে আরও কৌশলী হতে হবে।
‘একজনের পক্ষে অসম্ভব’! আরজি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতার পরিবার এবং আসামিপক্ষ একই সুরে প্রশ্ন তুলল আদালতে

