ভারত-চিন সম্পর্ক!
আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে চিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চিনা পণ্যের উপর শুল্ক দ্বিগুণ করায় বেজিংয়ের রোষ বেড়েছে। ঠিক এই সময়েই ভারতের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা দিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। তাঁর মতে, ভারত ও চিনের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক থাকলে তা শুধু দুই দেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের পক্ষেও লাভজনক হবে।
ভারত-চিন সম্পর্কের নতুন সমীকরণ
চিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি এক বার্ষিক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “ভারত এবং চিন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি। আমাদের হাতি ও ড্রাগনকে একসঙ্গে নাচিয়ে দিতে হবে। একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই না-করে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোই উচিত।” তিনি জানান, ২০২৪ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠকের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের অগ্রগতি হয়েছে। তাই, এই সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করাই এখন মূল লক্ষ্য।
আমেরিকার বাণিজ্য নীতির প্রভাব
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চিনা পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়েছে, যা এখন ২০ শতাংশে পৌঁছেছে। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বেজিং বরাবরই সরব ছিল। এমনকি, চিনা দূতাবাস সরাসরি ঘোষণা করেছে, “যদি আমেরিকা যুদ্ধ চায়, তা সে শুল্কযুদ্ধ হোক বা বাণিজ্যযুদ্ধ, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়তে প্রস্তুত।” পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকার প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, তারাও এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই চিন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা করছে।
সীমান্ত সমস্যা ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারত ও চিনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্ত সমস্যা রয়েছে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধ, ২০১৭ সালের ডোকলাম সংকট, ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষ—এই সমস্ত ঘটনার পরেও দুই দেশ কূটনৈতিকভাবে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করেছে। তবে চিন মাঝেমধ্যেই অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে এবং লাদাখ বা সিকিমে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) লঙ্ঘন করার চেষ্টা চালিয়ে যায়।
চিনের বিদেশমন্ত্রীর এই বন্ধুত্বের বার্তার পরও নয়াদিল্লি সতর্ক। ভারত সরকার জানে, আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে তাদের কৌশলগত সম্পর্ক এখন অনেক দৃঢ়। ফলে তারা চিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলেও নিজের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়ে কোনো আপস করবে না।
চিন-ভারত জোট: বাস্তব নাকি কৌশল?
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনের এই নতুন অবস্থান নিছক কৌশল মাত্র। আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে চিনের অর্থনীতি চাপে পড়েছে। ফলে তারা চাইছে, ভারতের মতো বড় অর্থনীতির দেশকে নিজেদের দিকে টেনে আনতে। তবে ভারতও জানে, চিনের ওপর পুরোপুরি ভরসা করা কঠিন। অতীতে বহুবার আলোচনার পরেও সীমান্তে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই ভারত এই পরিস্থিতি খুব সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
উপসংহার
ভারত ও চিন যদি সত্যিই একে অপরকে সহযোগিতা করে, তাহলে তা এশিয়ার পাশাপাশি গোটা বিশ্বের জন্যই লাভজনক হবে। তবে সীমান্ত সমস্যা এবং অতীতের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে নয়াদিল্লি চিনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে ধাপে ধাপে এগোতে চাইছে। একদিকে আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত মৈত্রী, অন্যদিকে চিনের নতুন বন্ধুত্বের আহ্বান—এই দুইয়ের ভারসাম্য রেখে ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ভারতের উপর পাল্টা শুল্ক চাপাচ্ছেন ট্রাম্প! ঘোষণা করলেন নির্দিষ্ট তারিখও