ভিটামিন ডি-র ঘাটতি
ভারতের অধিকাংশ জায়গাতেই সূর্যের তীব্র রোদের অভাব নেই, অথচ দেশের বিভিন্ন অংশে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি নিয়ে চিন্তা বেড়ে চলেছে। এমনকি অনেক মানুষ ভিটামিন ডি-র অভাবে নানা শারীরিক সমস্যা ও মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, যেমন হাঁটুতে ব্যথা, কোমরের যন্ত্রণা বা দুর্বল হাড়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যখন রোদ এত বেশি, তখন কেন এই ঘাটতি হয়?
ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হাড়ের গঠন শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং ক্যালসিয়াম শোষণের কাজেও সহায়ক। এর পাশাপাশি, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও এর ভূমিকা রয়েছে। তবে, বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে, তাদের শরীরে ভিটামিন ডি কমে যাচ্ছে, এবং সেই কারণে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি: কীভাবে প্রভাবিত হয় শরীর?
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে প্রতি মিলিলিটারে কমপক্ষে ২০ ন্যানোগ্রাম ভিটামিন ডি থাকা জরুরি। এর চেয়ে কম মাত্রায় শরীরে ভিটামিন ডি থাকলে তা হাড়ের ক্ষতি করে, এবং সাধারণ স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষভাবে, হাঁটু, কোমর বা পিঠের যন্ত্রণা হতে পারে, যার জন্য চিকিৎসকের কাছে গিয়ে অনেকেই জানতে পারেন, তাঁদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে।
রোদের অভাব নেই, তবু ঘাটতি কেন?
ভারতে সূর্যের রোদ কম নয়, তা সত্ত্বেও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি কেন হচ্ছে? ভিটামিন ডি মূলত সূর্যের আলো থেকে ত্বকে তৈরি হয়। সূর্যের আলোর ৮০ শতাংশ ভিটামিন ডি শরীরে চলে আসে। তবে কাজের ব্যস্ততা, অফিসের বাতানুকূল পরিবেশ, কিংবা বাইরে বেরোনোর সময়ের অভাবে অনেকেই রোদে খুব বেশি থাকেন না। এছাড়া, সূর্যের তাপমাত্রা যেমন এক জায়গায় থাকে, তেমনি শীতকালে কিংবা মেঘলা দিনে সূর্যের আলো ত্বকে ঠিকভাবে পৌঁছায় না।
গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ ভারতের শহরতলি ও গ্রামীণ এলাকায় ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির হার অনেক বেশি। সেই সঙ্গে, উত্তর ভারতের কিছু অংশেও এই সমস্যা লক্ষ্য করা গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা যাচ্ছে ৫০ বছরের ওপরে বয়সী মানুষদের মধ্যে, যেখানে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির মাত্রা প্রায় ৯৪ শতাংশ।
কীভাবে ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব?
ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করতে কিছু পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে:
- রোজ রোদে কিছুটা সময় কাটানো: সকাল ৯টা থেকে ২টার মধ্যে ১০-৩০ মিনিট রোদে থাকা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- খাবারে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার রাখা: যেমন, স্যামন, পমফ্রেট, কাতলা বা ইলিশ মাছ। এছাড়া, প্রাণিজ দুধ, মাশরুম (বিশেষ করে সি-টেক, মেইটেক) খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা: যদি খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন ডি সংগ্রহ করা না যায়, তাহলে ক্যাপসুল বা ট্যাবলেটের মাধ্যমে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।
- শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখা: নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটি শারীরিক সুস্থতার জন্য ভালো। বিশেষভাবে সকালে কিছুক্ষণ রোদে হাঁটা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণের একটি প্রাকৃতিক উপায়।
উপসংহার
ভারতে সূর্যের আলো মেলে, কিন্তু তা সত্ত্বেও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু সহজ পরিবর্তন এনে, যেমন রোদে কিছুটা সময় কাটানো এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব। তাই, আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।