Saturday, May 31, 2025

ভারতের কড়া বার্তা: সিন্ধুর জল বন্ধ, কৃষির করুণ পরিণতির মুখে পাকিস্তান

Share

ভারতের কড়া বার্তা!

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর তুমুল চাপে পড়েছে পাকিস্তান। এই হামলার জের টেনে ভারত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করার পর, নিজেদের অসহায় অবস্থার কথা আঁচ করে চোলিস্তান সেচখাল প্রকল্প বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল ইসলামাবাদ।

২৪ এপ্রিল পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার ঘোষণা করে, চোলিস্তান সেচ প্রকল্প আপাতত স্থগিত। অথচ মাত্র কয়েক মাস আগে, ১৫ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির ও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজের উপস্থিতিতে। মরিয়ম আবার শাহবাজ শরিফের ভাইঝি।

প্রকল্পটি মূলত কৃষিভিত্তিক পাকিস্তানের দক্ষিণ পঞ্জাবের শুষ্ক অঞ্চলে জল সরবরাহের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছিল। তবে শুরু থেকেই আপত্তির মুখে পড়ে এটি। সিন্ধু প্রদেশের দল পাকিস্তান পিপল্স পার্টি (পিপিপি) আশঙ্কা প্রকাশ করে, এতে পঞ্জাবের কৃষকেরা একচেটিয়া সুবিধা পাবেন, আর সিন্ধুর নীচের অংশের কৃষকেরা বঞ্চিত হবেন। প্রবল চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ ও পিপিপি প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো বৈঠকে বসেন। পরে সিদ্ধান্ত হয়, সকলের সম্মতি না পাওয়া পর্যন্ত প্রকল্প বন্ধ থাকবে।

এদিকে বিশ্লেষকদের মতে, প্রকল্প স্থগিত করার পিছনে আরেকটি বড় কারণ ভারতীয় পদক্ষেপ। সিন্ধু জলচুক্তি থেকে ভারতের সরে আসা ইসলামাবাদের কৃষি স্বপ্নে চরম আঘাত হেনেছে। ভারত যদি সিন্ধুর জল আটকে দেয়, তাহলে খাল কাটার কোনও অর্থই থাকে না — এই যুক্তিতেই চোলিস্তান প্রকল্প কার্যত ‘কবরে’ চলে গেল।

তবে পাকিস্তান এখানেই থেমে নেই। জলচুক্তি বাতিলের পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে, ভারতকে যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়েছে ইসলামাবাদ। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বারবার নয়াদিল্লিকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘‘সিন্ধুর প্রতিটি ফোঁটা জলের ওপর পাকিস্তানের অধিকার রয়েছে। জল আটকালেই আমরা তা যুদ্ধ হিসেবেই দেখব।’’

২০২৩ সালে পাকিস্তান ‘গ্রিন পাকিস্তান ইনিশিয়েটিভ’-এর অংশ হিসাবে চোলিস্তান প্রকল্প হাতে নেয়। ছয়টি খাল কাটার মাধ্যমে পঞ্জাব, সিন্ধু ও বালোচিস্তানে কৃষি বিস্তারের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সিন্ধু প্রদেশের প্রবল আপত্তি ও বর্তমান জটিল কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত সিন্ধু জলচুক্তি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে এলে পাকিস্তান ভয়ঙ্কর জলসংকটে পড়বে। আর এই পরিস্থিতিতে চোলিস্তান প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার মানে হতো আরও বড় রাজনৈতিক অস্থিরতা ডেকে আনা। তাই আপাতত নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই শাহবাজ শরিফ সরকার প্রকল্প বন্ধ করার পথে হাঁটল।

১৯৬০ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাক প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের মধ্যে সিন্ধু জলচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। দীর্ঘ ন’বছর আলোচনা শেষে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি কার্যকর হয়। এত বছর ধরে নানা সংঘাত সত্ত্বেও চুক্তি টিকে থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতি দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কে ভয়াবহ ফাটল ধরিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের এই টানাপোড়েন অদূর ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে।

পহেলগাঁও হামলা: বলিউডের তারকাদের ক্ষোভের মুখে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র বার্তা

Read more

Local News