Friday, May 9, 2025

বিজেপির ভোট প্রস্তুতি: পুরনো দফতরে ব্যস্ততা বাড়ানোর নির্দেশ

Share

বিজেপির ভোট প্রস্তুতি!

নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও হয়নি। তবুও পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সম্প্রতি আরএসএস আয়োজিত ‘সমন্বয় বর্গ’ থেকে ফিরেই রাজ্য নেতৃত্ব একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন, যা স্পষ্টতই আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়। সূত্রের খবর, বিজেপি মনে করছে বিধানসভা নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের আগেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। সেই কারণেই দ্রুত সংগঠনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মুরলীধর সেন লেনের পুরনো রাজ্য দফতরকে সাজিয়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সেক্টর ফাইভ থেকে ফের মুরলীধর সেন লেনে

বিজেপির রাজ্য দফতরের আনুষ্ঠানিক ঠিকানা এখনও ‘৬, মুরলীধর সেন লেন, কলকাতা ৭০০০৭৩’। তবে, কয়েক বছর আগেই মূল দফতর সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে রাজ্যের নেতৃত্ব ও কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা সেখান থেকেই সাংগঠনিক কার্যকলাপ পরিচালনা করছেন। কিন্তু প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই বিজেপি মূল রাজ্য দফতরের পাশাপাশি একটি অতিরিক্ত ‘ওয়ার রুম’ খোলে, যেখানে নির্বাচনী অভিযান পরিচালিত হয়।

২০২১ সালের বিধানসভা ও কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে হেস্টিংস মোড়ে বহুতল দফতর ব্যবহৃত হয়েছিল। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেক্টর ফাইভ দফতরই মূল ‘ওয়ার রুম’ হিসেবে কাজ করেছে। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। মূল সাংগঠনিক কাজ সেক্টর ফাইভ থেকেই চলবে, কিন্তু নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য মুরলীধর সেন লেনের পুরনো দফতরকে নতুন করে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই, সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী দ্রুত দফতর সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন।

কল সেন্টার পুনরায় চালু করার উদ্যোগ

গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির পুরনো রাজ্য দফতরের ওপরের তলায় একটি ‘কল সেন্টার’ চালু করা হয়েছিল। দলের নির্দেশে সেই কল সেন্টার থেকে রাজ্যের প্রতিটি এলাকায় ফোন করে নানা জরিপ চালানো হতো। সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া জানার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কতদূর হয়েছে, তা-ও পর্যবেক্ষণ করা হতো। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর এই কল সেন্টার বন্ধ হয়ে যায়। এবার আবার সেটি চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এই কল সেন্টার পুনরায় চালু করতে খুব বেশি সময় লাগবে না, কারণ পরিকাঠামোর বেশির ভাগই বিদ্যমান। ডেস্ক, চেয়ার, বৈদ্যুতিক সংযোগ সবই আছে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় দফতরের অবস্থার অবনতি হয়েছে। বাড়ির ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ছে, কোথাও কোথাও শ্যাওলা ধরা স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল দেখা যাচ্ছে। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে সেখানে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালানো কঠিন হবে।

দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ

এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজেপির ‘ভবন নির্মাণ’ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অবিলম্বে সংস্কারকাজ শুরু করতে। সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী বিশেষভাবে বলেছেন, জল চুঁইয়ে পড়া বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, এই কল সেন্টার সরাসরি দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে রিপোর্ট করে, ফলে কোনো সমস্যা হলে দিল্লির কাছে অভিযোগ পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতেই রাজ্য নেতৃত্ব আগেভাগে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

আগাম ভোটের প্রস্তুতি?

এত আগেভাগে বিজেপি কেন প্রস্তুতি নিচ্ছে? রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র ও সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘এর সঙ্গে সমন্বয় বর্গের কোনো সম্পর্ক নেই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপি সারা বছরই সংগঠনের কাজ চালিয়ে যায়। তবে এক বছর পর নির্বাচন তো হবেই, তার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করা স্বাভাবিক। তবে আমরা ধরে নিচ্ছি, নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের আগেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। কারণ, এই সরকার ২০২৬ সাল পর্যন্ত টিকে থাকবে কি না, তা বলা কঠিন। সব দিক বিবেচনা করেই বিজেপি আগেভাগে প্রস্তুতি নিচ্ছে।’’

উপসংহার

বিজেপির এই তৎপরতা দেখেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে, তবে কি বাংলায় আগাম নির্বাচন হতে চলেছে? রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল অবশ্য এ ব্যাপারে এখনো কিছু বলেনি। তবে বিজেপির এই আগাম প্রস্তুতি নিঃসন্দেহে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন দেখার, এই কৌশল কতটা কার্যকর হয়।

ভারতের উপর পাল্টা শুল্ক চাপাচ্ছেন ট্রাম্প! ঘোষণা করলেন নির্দিষ্ট তারিখও

Read more

Local News