Friday, March 21, 2025

বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ‘উন্নয়ন ফি’ দাবি: মেমারিতে শোরগোল

Share

বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ‘উন্নয়ন ফি’ দাবি

পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি এক নম্বর ব্লকের বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, বাংলার বাড়ি প্রকল্পে অনুদান প্রাপ্তদের কাছ থেকে ‘উন্নয়ন ফি’ হিসেবে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। মেমারি ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সবক’টি তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে এবং এখানকার বেশিরভাগ পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে এই অনৈতিক টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি জানাজানি হতেই ব্লক এবং জেলা প্রশাসন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

কী চলছে মেমারির গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোতে?

মেমারি এক নম্বর ব্লকে প্রায় ৪,৫০০ জন নাগরিক বাংলার বাড়ি প্রকল্পের সুবিধাভোগী। অভিযোগ, এদের মধ্যে অনেকেই প্রথম কিস্তির ৬০,০০০ টাকা পেয়ে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু তারা অভিযোগ করেছেন, পঞ্চায়েত অফিসের কর্মকর্তারা তাদের থেকে ‘উন্নয়ন ফি’ দাবি করছেন। এমনকি দলুইবাজার দু’নম্বর পঞ্চায়েত মাইকে প্রচার করে এই ফি নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

তবে অভিযোগটি প্রকাশ্যে আসতেই মেমারি ব্লক প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। মেমারি এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি এই বিষয়ে বিডিওকে অভিযোগ জানিয়েছেন এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে, শুধু দলুইবাজার নয়, মেমারির অন্য পঞ্চায়েতগুলোও একই ধরনের অভিযোগের শিকার বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। নিমো ২ ও দুর্গাপুর পঞ্চায়েতেও একই অভিযোগ উঠেছে।

‘উন্নয়ন ফি’ দাবি করা হচ্ছে কেন?

নিমো দু’নম্বর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ আব্দুল রহমান স্বীকার করেছেন যে, কিছু গৃহনির্মাতা তাদের থেকে ‘উন্নয়ন ফি’ নিচ্ছেন। তবে তাঁর দাবি, যাদের বাড়ি বড় আকারে তৈরি হচ্ছে, তাদের থেকেই এই ফি নেওয়া হচ্ছে। তিনি দাবি করেছেন, যাদের বাড়ি প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে কোন টাকা নেয়া হয়নি। দুর্গাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নিতাই ঘোষও একই ধরনের বক্তব্য রেখেছেন, তবে তার দাবি, ‘উন্নয়ন ফি’ নেয়া হচ্ছে কেবল তাদের কাছ থেকে যারা স্বেচ্ছায় এই টাকা দিচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিতর্ক এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞা

মেমারি এক নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েতগুলো থেকে টাকা তোলার অভিযোগে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মেমারি বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য জানান, বাংলার বাড়ি প্রকল্পে পঞ্চায়েতের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন, পঞ্চায়েতেরা এই প্রকল্পে অনুদান প্রাপকদের কাছ থেকে কোনো ধরনের টাকা নেবে না। তবে এমনকি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু পঞ্চায়েত টাকা নিচ্ছে, যা মোটেই ঠিক নয়।” তিনি বলেন, তিনি বিডিওকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য বলেছেন।

এদিকে, এই ‘উন্নয়ন ফি’ তোলার ঘটনায় বিজেপি দলের নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র শোরগোল তুলেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, “এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞা এখন আর কোনো মূল্য নেই। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলো এখন নিজের ইচ্ছেমতো জনগণের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে।”

ভয় পেয়ে চুপ করে থাকছেন উপভোক্তারা

এ সব অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, উপভোক্তারা ভয় পাচ্ছেন যদি তাদের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আটকে যায়। অনেকেই এই কারণে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তাঁরা জানেন, এই অভিযোগে যদি প্রশাসন জানতে পারে, তবে তাদের ভবিষ্যতের উপকারিতা রুখে দেওয়া হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করা এবং উপভোক্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপসংহার

বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ‘উন্নয়ন ফি’ নেওয়ার অভিযোগে মেমারি ব্লকে যে শোরগোল উঠেছে, তা এখন সরকারের কাছেও একটি গুরুতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, জনবিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং প্রকল্পের সুনামও নষ্ট হবে। তাই প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের উচিত, অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

‘কহো না প্যার হে’-এর শুটিংয়ে গুলিবিদ্ধ অমিশা, ভোর ৪টের সময় হাসপাতালে ছুটলেন হৃতিক!

Read more

Local News