Thursday, January 30, 2025

বাংলায় গিয়ান-ব্যারের থাবা, কেন আক্রান্ত হচ্ছে ছোটরা? সতর্ক থাকার উপায় বললেন চিকিৎসকেরা

Share

গিয়ান-ব্যারের থাবা

বর্তমান সময়ে বাংলায় গিয়ান-ব্যারে সিনড্রোমের (Guillain-Barré Syndrome) প্রকোপ বাড়ছে, এবং শিশু-কিশোরদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা চোখে পড়ছে। কলকাতায় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আরও দুই শিশু বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুতর উপসর্গ দেখা দিয়েছে। গিয়ান-ব্যারে সিনড্রোমের কারণে শরীরে দ্রুত পক্ষাঘাত হতে পারে, এবং এটি শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে, কীভাবে এই রোগটি ছড়ায় এবং কীভাবে সতর্ক থাকা যেতে পারে, তা জানাতে চিকিৎসকরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন।

গিয়ান-ব্যারে সিনড্রোম কী?

গিয়ান-ব্যারে সিনড্রোম একটি বিরল রোগ, যার ফলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজের স্নায়ু সিস্টেমের বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করে। এটি সাধারণত একটি ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের পরে ঘটে, এবং আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অস্বাভাবিক স্নায়ু সমস্যা দেখা দেয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে, রোগী হঠাৎ করে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

শিশুদের মধ্যে গিয়ান-ব্যারের উপস্থিতি

শিশু-কিশোরদের শরীরে গিয়ান-ব্যারের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে তা অত্যন্ত মারাত্মক হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত হলে, শিশুদের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, গলাব্যথা, পেটে সমস্যা, হাত ও পায়ের আঙুলে ব্যথা, হাঁটাচলায় সমস্যা এবং পিঠে বা কোমরে ব্যথার উপসর্গ দেখা যায়। এছাড়া, মুখ বাঁকানো, বুকে চিনচিনে ব্যথা এবং শরীরের একদিক অসাড় হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

কীভাবে গিয়ান-ব্যারের ভাইরাস ছড়ায়?

গিয়ান-ব্যারের জন্য দায়ী প্রধান ভাইরাসগুলি হল ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর জেজুনি (Campylobacter jejuni), সাইটোমেগালোভাইরাস (Cytomegalovirus), এবং নোরোভাইরাস (Norovirus)। এছাড়াও, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, অন্ত্রের বা খাদ্যনালির সংক্রমণও এই রোগের জন্য দায়ী হতে পারে। চিকিৎসকরা বলেন, এই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সাধারণত খাবার বা পানীয়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে, তবে শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাও এই রোগের কারণ হতে পারে।

গিয়ান-ব্যারের উপসর্গ এবং তা কীভাবে শনাক্ত করা যায়?

গিয়ান-ব্যারের উপসর্গ শুরু হওয়ার পর রোগী দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে, হাত ও পায়ের আঙুলে ব্যথা, পায়ের পেশিতে টান ধরা, হাঁটাচলায় সমস্যা, পিঠ এবং কোমরের ব্যথা। রোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুখ বাঁকানো এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এই রোগ দ্রুত বেড়ে গিয়ে রেসপিরেটরি প্যারালিসিসের সৃষ্টি করতে পারে, যার জন্য অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হতে পারে।

রোগটি শনাক্ত করতে চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা করতে পারেন, যেমন স্পাইনাল ট্যাপ, ইলেকট্রোমায়োগ্রাম (EMG), নার্ভ কন্ডাকশন ভেলোসিটি টেস্ট (NCV), এবং এমআরআই (MRI)। এর মাধ্যমে স্নায়ু ও মস্তিষ্কের অবস্থা নির্ণয় করা হয়।

গিয়ান-ব্যারেকে প্রতিরোধ করার উপায়

গিয়ান-ব্যারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে কিছু সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

১) কাঁচা স্যালাড এবং বাসি খাবার এড়িয়ে চলুন: এই খাবারগুলোতে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস থাকতে পারে।
২) দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য সতর্কতার সাথে ব্যবহার করুন: দুধ ফুটিয়ে খাওয়া উচিত এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য এড়িয়ে চলুন।
৩) বেবি ফুড সতর্কতার সাথে ব্যবহার করুন: শিশুর খাবারে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সম্ভাবনা থাকতে পারে।
৪) জল ফুটিয়ে খাওয়ান: শিশুকে জল ফুটিয়ে খাওয়ানো স্বাস্থ্যসম্মত।
৫) ফল ও শাকসবজি ভালোভাবে ধুয়ে ব্যবহার করুন: বাজার থেকে কেনা শাকসবজি বা ফল ধুয়ে খাওয়া উচিত।
৬) কাঁচা মাছ বা মাংস রান্নার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিন: কাঁচা মাংস বা মাছ ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করুন, বিশেষত রাস্তায় বিক্রি হওয়া খাবার এড়িয়ে চলুন।

চিকিৎসার উপায়

গিয়ান-ব্যারের চিকিৎসার জন্য ‘ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন’ (IVIG) এবং প্লাজ়মা থেরাপি কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই চিকিৎসা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বাড়ায়।

এভাবে, গিয়ান-ব্যারে সিনড্রোম সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং সতর্কতার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

শ্রীদেবী-কন্যা খুশি কপূরের বদলে যাওয়া মুখ, নাক, ঠোঁটের গড়ন: অস্ত্রোপচারের গল্প নিজেই শেয়ার করলেন!

Read more

Local News