Thursday, January 30, 2025

পেটে ব্যথার কারণ গলস্টোন নয় তো? জানুন চিকিৎসকের পরামর্শ

Share

পেটে ব্যথার কারণ গলস্টোন নয় তো?

পেটে ব্যথা বা হজমের সমস্যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খুব সাধারণ সমস্যা। কিন্তু যদি এই সমস্যাগুলি নিয়মিতভাবে বাড়তে থাকে, তখন তা অশনিসঙ্কেত হতে পারে। এমন অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, এই ধরনের উপসর্গের পেছনে লুকিয়ে থাকে পিত্তথলিতে পাথর, যা আমরা গলস্টোন হিসেবে চিনি। ভারতীয় খাদ্যাভ্যাস এবং অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়।

চিকিৎসকেরা বলছেন, পেটে ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা হালকাভাবে নিলে চলবে না। গলস্টোন অনেক ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই বিষয়ে সচেতনতা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন এইচপি ঘোষ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট চিকিৎসক ডা. অতীন্দ্রিয় বিশ্বাস

গলস্টোন কী এবং এর সমস্যা কীভাবে শুরু হয়?

গলস্টোন হল পিত্তথলিতে জমে থাকা শক্ত পদার্থ, যা পিত্ত রস থেকে তৈরি হয়। এটি ছোট দানার মতো হতে পারে, আবার বড় আকৃতিরও হতে পারে। অনেক সময় এই পাথর পিত্তথলি থেকে বেরিয়ে পিত্তনালিতে আটকে যায়। এই অবস্থায় মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • জন্ডিস: পিত্তনালিতে পাথর আটকে গেলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলদেটে হয়ে যায়।
  • প্যাংক্রিয়াটাইটিস: পাথর প্যানক্রিয়াসে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক।
  • গলব্লাডারে সংক্রমণ বা এমপাইমা: বড় পাথরের কারণে পিত্তথলিতে পুঁজ জমতে পারে। এটি খুবই জটিল অবস্থা এবং তৎক্ষণাৎ অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়।

চিকিৎসক বিশ্বাস বলেন, “গলস্টোন দীর্ঘদিন ধরে রেখে দিলে তা থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”

গলস্টোন

গলস্টোনের চিকিৎসা কীভাবে করা হয়?

বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতিতে গলস্টোনের সমস্যা সমাধান তুলনামূলক সহজ হয়েছে। ডা. বিশ্বাস জানান, “এখনকার দিনে প্রায় ৯৯ শতাংশ অস্ত্রোপচার ল্যাপ্রোস্কোপির মাধ্যমে করা হয়। এতে পেটের ৩-৪টি ছোট ফুটো করে ক্যামেরা এবং যন্ত্রপাতি ঢুকিয়ে পাথর সরিয়ে ফেলা হয়। সাধারণত আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা সময় লাগে এই অপারেশনে। রোগী পরদিনই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।”

এই পদ্ধতির বিশেষত্ব হল:

  • কম সময় লাগে।
  • ক্ষত খুব ছোট থাকে।
  • সংক্রমণের ঝুঁকি কম।
  • রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

তবে উপসর্গ উপেক্ষা করলে সমস্যা জটিল হতে পারে। দীর্ঘদিন পাথর রেখে দিলে গলব্লাডারের সংক্রমণ, জটিল জন্ডিস এবং এমনকি ক্যানসারের আশঙ্কাও থেকে যায়।

গলস্টোন এড়ানোর উপায়

পিত্তথলির পাথর এড়াতে কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন:

  1. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান। তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।
  2. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা গলস্টোন হওয়ার অন্যতম কারণ। নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  3. পর্যাপ্ত জল পান: শরীর হাইড্রেটেড থাকলে পিত্তরসের ভারসাম্য বজায় থাকে।
  4. সমস্যা হলে অবহেলা করবেন না: পেটে ব্যথা বা অম্বল লেগে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।

পেটে ব্যথা হালকাভাবে নেবেন না

ভারতীয় খাদ্যাভ্যাসের কারণে হজমের সমস্যা ও পেটে ব্যথা খুব সাধারণ মনে হলেও, অনেক ক্ষেত্রেই এগুলি হতে পারে বড় বিপদের প্রাথমিক লক্ষণ। তাই নিজে থেকে ওষুধ খেয়ে সমস্যাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। চিকিৎসকের মতে, উপসর্গ দেখা দিলেই সঠিক পরীক্ষা করানো জরুরি।

গলস্টোনের সমস্যা শুরুতে ধরা পড়লে তা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু দেরি হলে সমস্যা জটিল হয়ে ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার পর্যন্ত গড়াতে পারে। তাই সঠিক সময়ে সচেতন হওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিন এবং নিয়ম মেনে চলুন। জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তনই আপনাকে রাখতে পারে সুস্থ ও নিরোগ।

‘আইআইটি বাবা’: সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথে এক যুবা ইঞ্জিনিয়ারের যাত্রা

Read more

Local News