পুনর্বাসনে কোনও প্রস্তাব পায়নি কেন্দ্র
গত পাঁচ বছরে দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো যে এক বড় পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে, তা নতুন করে স্পষ্ট হল কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য থেকে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্র জানায়, এই পাঁচ বছরে মোট ২ লক্ষ ৪ হাজার ২৬৮টি বেসরকারি সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও চাকরি হারানো কর্মীদের পুনর্বাসনের বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে কোনও প্রস্তাব পৌঁছয়নি— এমনই দাবি কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হর্ষ মলহোত্রের।
লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে উঠে আসে গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্য। সাংসদেরা জানতে চান— পাঁচ বছরে ঠিক কতগুলি সংস্থা বন্ধ হয়েছে এবং তাঁদের কর্মীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় কেন্দ্র কোনও পদক্ষেপ করেছে কি না। লিখিত জবাবে মন্ত্রী জানান, ২০১৩ সালের কোম্পানি আইনের আওতায় ২ লক্ষেরও বেশি সংস্থা রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোনও সংস্থা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হয়েছে, কোনওটি নতুন নামে পুনর্গঠিত হয়েছে, আবার বহু সংস্থা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
কোন বছরে কত সংস্থা বন্ধ হলো?
সরকারি হিসাব অনুযায়ী—
- ২০২০–২১: ১৫,২১৬টি সংস্থা বন্ধ
- ২০২১–২২: ৬৪,০৫৪টি সংস্থা বন্ধ
- ২০২২–২৩: ৮৩,৪৫২টি সংস্থা বন্ধ
- ২০২৩–২৪: ২১,১৮১টি সংস্থা বন্ধ
- ২০২৪–২৫: ২০,৩৬৫টি সংস্থা বন্ধ
তালিকাটি দেখলে স্পষ্ট— কোভিড এবং কোভিড-পরবর্তী সময়েই সবচেয়ে বেশি সংস্থার তালা ঝুলেছে। বিশেষ করে ২০২১–২২ এবং ২০২২–২৩ অর্থবর্ষে সংস্থা-বন্ধের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। তবে এত সংস্থা কেন বন্ধ হয়ে গেল এবং অর্থনীতির কোন খাতে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে— সে বিষয়ে কেন্দ্র কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি।
পুনর্বাসন নিয়ে প্রশ্ন
সংস্থাগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার কর্মীর চাকরি গেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য কোনও প্রস্তাব কি কেন্দ্রের কাছে এসেছে?
মন্ত্রী জানান— একটিও নয়।
অর্থাৎ, সংস্থা-বন্ধ হলেও কর্মীদের নতুন কর্মসংস্থান বা আর্থিক সুরক্ষার দাবিতে কোনও সংগঠন বা সংস্থা সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে পরিস্থিতির তাৎপর্য
অর্থনীতিবিদদের মতে, বেসরকারি সংস্থাগুলি দেশের কর্মসংস্থানের একটি বড় উৎস। এই খাতে এত বিপুল সংখ্যায় সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে। বিশেষত ছোট ও মাঝারি শিল্পই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
এছাড়া, করোনা-পরবর্তী বাজার সংকোচন, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, ব্যবসায়িক ঋণপ্রাপ্তিতে জটিলতা এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারাই সংস্থা বন্ধের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই। যদিও সরকারের জবাবে এসব বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যা নেই।
পাঁচ বছরে প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ?
এ দিনের আলোচনায় আর একটি সংখ্যাও উঠে আসে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ২০২১–২২ অর্থবর্ষ থেকে ২০২৪–২৫-এর জুলাই পর্যন্ত মোট ১,৮৫,৩৫০টি সংস্থা রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
তুলনায় পাঁচ বছরের পূর্ণ হিসাব আরও বড়। দুই তথ্য মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন— প্রকৃত পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে।
উপসংহার
সংস্থা বন্ধ হওয়া যেমন উদ্বেগের, তেমনই উদ্বেগের বিষয় পুনর্বাসনে কোনও সরকারি উদ্যোগ না-থাকা। সংস্থা বন্ধের ফলে কর্মসংস্থানের বাজার কতটা চাপে পড়েছে, তা আগামী দিনে আরও স্পষ্ট হবে।

