পয়লা বৈশাখে মাছের ঝোল আর নেই!
এ বারের নববর্ষটা যেন একেবারেই অন্যরকম। আনন্দ বা উৎসব নয়, বরং হৃদয়ের গভীরে এক অপূরণীয় শূন্যতা নিয়ে এসেছে এই দিনটা। কারণ, এটাই প্রথম পয়লা বৈশাখ, যখন আমার মা নেই। দু’সপ্তাহ আগে মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আর তাতেই যেন সময়টা থমকে গেছে।
ছোটবেলা থেকে নববর্ষ মানেই ছিল মায়ের হাতের রান্না, ঘরের গন্ধ, আর পরিবারের একসাথে খাওয়াদাওয়া। আমাদের বাড়ির রীতি ছিল, মা নিজে হাতে সবাইকে রান্না করে খাওয়াতেন। গত বছরও, অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ফিরে, মা কষ্ট করে রান্নাঘরে গিয়ে আমার জন্য এক বাটি মাছের ঝোল বানিয়েছিলেন। সেই মাছের ঝোলটাই এখন আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান স্মৃতি।
মা শুনেছিলেন, আমি ভাল খেতে পারছি না—তাই খবর পেয়েই, শরীরটা একেবারেই ভালো না থাকা সত্ত্বেও রান্না করেছেন। আর সেই শেষ রান্নাটাই হয়ে গেল আমার কাছে চিরস্মরণীয়। এ বারের পয়লা বৈশাখে আমি সেই মাছের ঝোলটা অনেক বেশি মিস করব।
মায়ের রান্না মানেই ভালবাসা
মায়ের হাতের রান্না শুধুই স্বাদে নয়, আবেগে পরিপূর্ণ। তাঁর করা পাঁঠার মাংসের ঝোল, পোস্ত, শাক-ভাজা—সব কিছুতেই ছিল নিখাদ ভালবাসা। বিয়ের আগে প্রতি নববর্ষে মা পঞ্চব্যাঞ্জনের আয়োজন করতেন—ডাল, বড়ি ভাজা, দুই তিন রকম মাছের পদ, সব তিনি নিজে করতেন। এখন আমরা এতটা পারি না, কিন্তু মা সব সামলাতেন হাসিমুখে।
কখনও আবার বলতাম, “আজ তোমার ছুটি, চলো বাইরে খেতে যাই।” মা মুখে কিছু না বললেও বুঝতাম—উনি খুব খুশি।
রান্নার প্রতি টানটাই হারিয়ে ফেলেছি
গত এক বছরে মায়ের শরীরের অবনতির পর যখন ওঁর রান্না বন্ধ হয়ে যায়, তখন থেকেই আমারও যেন খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। আমি পৃথিবীর বহু জায়গায় ঘুরেছি, নামি দামি রেস্তরাঁয় খেয়েছি। কিন্তু বাড়ি ফিরে মায়ের রান্না খাওয়া—সেটাই ছিল স্বর্গীয় অনুভূতি।
মা জানতেন, আমি কী খেতে ভালবাসি, জানতেন খিদে পেলে আমি রেগে যাই। তাই আমি যখনই বাড়ি যাচ্ছি—মা আগেই কিছু রান্না করে রাখতেন। এমন অনেকবার হয়েছে, আমি হঠাৎ বাড়ি গিয়ে দেখি—মা নুডুলস বানিয়ে রেখেছেন। সেই মুঠো ভালবাসা আর কখনও ফিরে পাব না।
এ বছর মায়ের স্মৃতিকে সঙ্গী করেই…
নববর্ষ মানেই বাঙালিয়ানা, আর তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে খাবার। মায়ের কাছ থেকেই শিখেছি রান্না, চেষ্টা করি তাঁর পদগুলো রাঁধতে। কিন্তু জানি, তাঁর স্পর্শ, তাঁর ভালবাসা কোনও রেসিপিতে আসে না।
এ বারের নববর্ষে তাই পরিবারের জন্য মায়ের পছন্দের কোনও একটা পদ রাঁধার চেষ্টা করব। হয়তো স্বাদটা হুবহু হবে না, কিন্তু ভালবাসাটা দেব মন থেকে। কারণ, মায়ের হাতের রান্না মানেই তো সন্তানের জন্য শুভকামনার এক নিঃশব্দ উপহার।
মা নেই, কিন্তু তাঁর সেই ভালবাসা, স্মৃতি, আর সেই এক বাটি মাছের ঝোল—আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হয়ে রইল।
অগ্নিগর্ভ মুর্শিদাবাদ, আর ইউসুফ পঠান ‘ফুরফুরে চা’-এ মশগুল! ক্ষোভে ফুঁসছে জনতা