দুধ দিয়ে মাখানা খেলে বাড়তি কী পুষ্টিগুণ মিলবে?
স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের মধ্যে আজকাল মাখানার জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে। ছোট্ট সাদা বলের মতো দেখতে পদ্মফুলের বীজটি এখন বিভিন্ন স্ন্যাকসের মধ্যে একটি অন্যতম পছন্দের খাবার হয়ে উঠেছে। তবে, মাখানা কীভাবে খাওয়া হবে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, যদি দুধে ভিজিয়ে খাওয়া হয়, তাহলে কি এর পুষ্টিগুণ আরও বাড়বে? আসুন, জানা যাক কীভাবে মাখানা খেলে আপনার স্বাস্থ্য উপকার পেতে পারে এবং কারা এই খাবারটি উপভোগ করতে পারেন।
মাখানা, যা ইংরেজিতে ‘ফক্স নাট’ নামে পরিচিত, আসলে পদ্মফুলের বীজ। এই বীজটি প্রথমে সংগ্রহ করে ধুয়ে, প্রক্রিয়াকরণ করে খোসা ছাড়ানো হয়, এরপর প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ— সবই যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার।
বর্তমানে মাখানার স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। পুষ্টিবিদেরা পরামর্শ দেন, সন্ধ্যাবেলা খেতে হলে কম ক্যালোরির এবং ফাইবার, খনিজ সমৃদ্ধ কিছু খাবার। সে ক্ষেত্রে মাখানা খুবই উপযুক্ত। তাছাড়া, সম্প্রতি বাজেট পেশের সময় কেন্দ্রীয় সরকারও মাখানা চাষিদের উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছে, যা এই খাবারের আরো প্রসারের দিকে ইঙ্গিত করছে।
তবে, শুধুমাত্র মাখানাই নয়, দুধও পুষ্টির একটি অন্যতম উৎস। দুধে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম— যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর মতে, দুধে মাখানা ভিজিয়ে খেলে, এই দুই উপাদান একত্রিত হয়ে শরীরের জন্য আরও বেশি উপকারে আসতে পারে। তিনি বলেন, “মাখানায় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ভিটামিন, খনিজ রয়েছে, যা শরীর ভাল রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। দুধের সঙ্গে মাখানা মেশালে এর পুষ্টিগুণ আরও বৃদ্ধি পায়।”
দুধ-মাখানার উপকারিতা
১. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
মাখানায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা হজমে সাহায্য করে এবং পেটের স্বাস্থ্যকে বজায় রাখে। এই কারণে, যারা ওজন কমাতে চান, তারা মাখানাকে তাদের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। দুধে থাকা ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়াম এবং পটাশিয়াম মাখানার সঙ্গে একত্রে খেলে এটি আরও কার্যকর হয়ে ওঠে। এতে ক্যালোরির পরিমাণ কম, ফলে এটি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করবে।
২. হাড় মজবুত রাখে
দুধ এবং মাখানা একসাথে খেলে শরীরে থাকা ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ বাড়ে, যা হাড়ের শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, ভিটামিন ডি এর উপস্থিতি হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সহায়ক।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
মাখানার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, অর্থাৎ এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায় না। তাই, ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে মাখানা খেতে পারেন। একই সঙ্গে, দুধের সঙ্গে মাখানা খেলে এটি আরও স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।
কিভাবে, কীভাবে, এবং কতটা খেতে পারবেন?
সকালের নাস্তায় সিরিয়ালের বদলে দুধে মাখানা ভিজিয়ে খেতে পারেন। এটি স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর এবং কম ক্যালোরি। তবে পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দেন, এতে যেন চিনি যোগ না করা হয়। যে কোনও সুস্থ মানুষই দিনে ৩০-৫০ গ্রাম মাখানা খেতে পারেন। তবে, যদি কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, যেমন খাবার হজমে সমস্যা বা কিডনির সমস্যা, তাহলে মাখানা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, তাদের মাখানা খাওয়া উচিত নয়।
শেষে, বলা যায়, মাখানা ও দুধের যুগলবন্দী একদম স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু। তবে, স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে এটি উপভোগ করার জন্য সঠিক পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।
গোটা রান্না: সরস্বতী পুজোয় পূর্ব বাংলার ঐতিহ্য, চচ্চড়ির স্বাদে নতুনত্ব