থাইরয়েডের সমস্যায় কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা জরুরি?!
আজকের দিনে ডায়াবেটিসের মতোই থাইরয়েডও এক সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শরীরের গলার কাছে অবস্থিত ছোট্ট থাইরয়েড গ্রন্থিটি নিয়ন্ত্রণ করে বিপাকক্রিয়া থেকে শুরু করে শক্তি উৎপাদন—নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরক্সিন হরমোনের মাত্রা সামান্য ওঠানামা করলেই শরীরে দেখা দিতে পারে বড় ধরনের পরিবর্তন। কারও হঠাৎ ওজন বেড়ে যায়, কারও আবার ওজন কমে যায় অস্বাভাবিক হারে। তৈরি হয় ক্লান্তি, অবসাদ, এমনকি দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করলে ক্যানসারের ঝুঁকিও থেকে যায়।
থাইরয়েডের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি হলেও, খাওয়াদাওয়ায় সামান্য সতর্ক থাকলে এর প্রভাব অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। কারণ ভুল খাদ্যাভ্যাস এই অসুখকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন খাবারগুলি থাইরয়েড রোগীদের এড়িয়ে চলা উচিত—
১. সয়াবিন
সয়াবিন ও এর তৈরি খাবারে থাকে ফাইটোইস্ট্রোজেন এবং গোয়াইট্রোজেন, যা থাইরয়েড হরমোনের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে। নিয়মিত সয়া দুধ বা সয়া জাতীয় খাবার খেলে থাইরয়েডের ওষুধও শরীরে সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। তাই পুরোপুরি বাদ না দিলেও খাওয়া উচিত সীমিত পরিমাণে।
২. গ্লুটেনযুক্ত খাবার
ময়দা, পাস্তা, কেক বা বিস্কুটের মতো গ্লুটেনসমৃদ্ধ খাবার থাইরয়েড রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এগুলি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, যার ফলে হরমোন নিঃসরণে প্রভাব পড়ে। তাই রুটি বা আটার বিকল্প বেছে নেওয়াই উত্তম।
৩. প্রক্রিয়াজাত খাবার
প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকে অতিরিক্ত নুন ও কৃত্রিম উপাদান। হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই ধরনের খাবার হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস বা ক্যানজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
৪. অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার
তেলেভাজা, মাখন বা বেশি চর্বিযুক্ত খাবার থাইরয়েড রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এগুলি শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং দ্রুত ওজন বাড়িয়ে তোলে। তবে বাদাম বা অলিভ অয়েলের মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।
৫. চিনি ও কৃত্রিম মিষ্টি
থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য চিনি বড় শত্রু। এটি বিপাকক্রিয়াকে ধীর করে এবং শরীরকে আরও ক্লান্ত করে তোলে। মিষ্টি, চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টিজাত খাবার খেলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
এছাড়াও কিছু ফল যেমন স্ট্রবেরি, চিনেবাদাম বা মিলেট জাতীয় খাবার সীমিত পরিমাণে খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
উপসংহার
থাইরয়েডের অসুখ একদিনে সারে না, তবে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ, ওষুধ খাওয়া এবং সঠিক খাবার বেছে নিলে এই অসুখে আক্রান্ত মানুষও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। তাই অযথা ভয় না পেয়ে সচেতন হোন, আর শরীরের প্রতি দায়িত্বশীল থাকুন।
ট্রোলের জবাবে মৌনী রায়: ‘‘ভালবাসা শিখুন, নয়তো জীবন ব্যর্থ’’

