সুকান্তর কণ্ঠে মুর্শিদাবাদের ক্ষোভ!
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ ঘিরে অশান্ত হয়ে ওঠা মুর্শিদাবাদ এখন অনেকটাই শান্ত। কিন্তু সেখানকার ১১ জন ‘আক্রান্ত ও ঘরছাড়া’ মানুষকে নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে দেখা করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানালেন, “ডিজিকে শুধু অভিযোগ জানাতে নয়, আয়নাও দেখাতে গিয়েছিলাম।”
বুধবার ভবানী ভবনে রাজ্য পুলিশের সদর দফতরে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, তাপস রায় ও অর্জুন সিংহ। যদিও বৈঠকের পরেও আশ্বস্ত হতে পারেননি সুকান্তরা। তাঁর কথায়, “ডিজি আমাদের অভিযোগ শুনেছেন ঠিকই, কিন্তু কোনও আশ্বাস দেননি। তাঁর একটাই কথা— সব কিছু নাকি আইনের পথে হবে।”
‘ঘরছাড়া’ মহিলাদের হতাশা, বিএসএফ ছাড়া ভরসা নেই!
ভবানে বৈঠক শেষে সুকান্তর সঙ্গে থাকা কয়েকজন মহিলা জানান, তাঁরা নিজেদের এলাকায় ফেরার মতো পরিস্থিতি দেখছেন না। একজন বলেন, “আমরা নিরাপত্তা চাই। কিন্তু তা বিএসএফ ছাড়া সম্ভব নয়।” এই প্রসঙ্গেই সুকান্ত বলেন, “ডিজিকে আয়না দেখাতে এসেছিলাম। দেখাতে চেয়েছি বাস্তব পরিস্থিতি।”
পুলিশের দ্বারে ধর্না
বিকেলে বিজেপির রাজ্য দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে সুকান্ত জানান, মুর্শিদাবাদের ওই ১১ জনই সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অশান্তির শিকার। তাঁদের নিয়ে ডিজির সঙ্গে দেখা করতে ভবানী ভবনে গেলে প্রথমে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ জানায়, মাত্র চার জনের প্রতিনিধিদল ঢুকতে পারবে। কিন্তু সুকান্তরা তাতে রাজি না হয়ে ভবানী ভবনের বাইরেই ধর্নায় বসে পড়েন।
প্রথমে দেখা না হলেও পরে পুলিশের তরফে আশ্বাস মেলে। শেষমেশ ডিজির সঙ্গে বৈঠকে ঢোকেন বিজেপির চার নেতা এবং ১১ জন আক্রান্ত ব্যক্তি।
‘সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিন’
সুকান্তর দাবি, “আমরা চাই প্রত্যেকে নিজের মুখে যা ঘটেছে তা ডিজিকে জানাতে পারেন। ভিক্টিমদের শুধু রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার নয়, ওঁদের সত্যি কণ্ঠস্বর পৌঁছনোর সুযোগ দেওয়া দরকার।”
প্রশাসনের পদক্ষেপ
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে অশান্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু অঞ্চল। পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের যৌথ অভিযানে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। ইন্টারনেট পরিষেবা শমসেরগঞ্জ ছাড়া বাকি এলাকাগুলিতে চালু হয়েছে। ঘটনার তদন্তে ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশ ৯ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
দিল্লির নজরে ঘটনা
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জাতীয় মহিলা কমিশন। বিজেপির একাংশ চাইছে, মুর্শিদাবাদের ঘটনাটি এনআইএ-র (NIA) হাতে তুলে দেওয়া হোক।
সব মিলিয়ে, একদিকে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা, অন্যদিকে বিজেপির অভিযোগ আর আক্রান্তদের নিরাপত্তার উদ্বেগ—এই দুইয়ের টানাপোড়েনে মুর্শিদাবাদ এখনও পুরোপুরি স্বস্তিতে ফিরতে পারেনি। সুকান্তর গলায় তাই আরও স্পষ্ট—“কেবল শুনলেই হবে না, ব্যবস্থা নিতেই হবে।”
মুর্শিদাবাদে ধীরে ধীরে স্বস্তির হাওয়া, ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ