Thursday, May 1, 2025

ট্রেন ছিনতাই ও মিথ্যার রাজনীতি: পাকিস্তান সেনার মুখোশ উন্মোচন

Share

ট্রেন ছিনতাই ও মিথ্যার রাজনীতি!

বালোচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস অপহরণকাণ্ড নিয়ে পাকিস্তান সেনার বক্তব্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘বালোচ লিবারেশন আর্মি’ (বিএলএ) অভিযোগ তুলেছে, ইসলামাবাদ সাধারণ মানুষের সামনে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করছে। এই ঘটনার পর পাকিস্তান সরকার এবং সেনাবাহিনী নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ভারত ও আফগানিস্তানের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।

কী ঘটেছিল ১১ মার্চ?

১১ মার্চ, বালোচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে খাইবার-পাখতুনখোয়ার পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ছিনতাই করেন বিএলএ-র যোদ্ধারা। তারা কিছু যাত্রীকে পণবন্দি করে। সেনাবাহিনী এই পরিস্থিতি সামাল দিতে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ, ফ্রন্টিয়ার কর্পস, বায়ুসেনা এবং আধাসেনা মোতায়েন করে। সেনা হেলিকপ্টার পাহাড়ি এলাকায় চক্কর কাটতে থাকে, এবং শুরু হয় উদ্ধার অভিযান।

সেনার দাবি বনাম বিদ্রোহীদের বক্তব্য

১২ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনা এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, তারা ৩৩ জন বিদ্রোহীকে হত্যা করেছে এবং ৩০০ জন পণবন্দি যাত্রীকে উদ্ধার করেছে। কিন্তু এই দাবির সঙ্গে বাস্তবতার বিস্তর ফারাক বলে দাবি করছে বিএলএ। তাদের মতে, যুদ্ধ এখনও চলছে, পণবন্দিরা এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে

বিএলএ মুখপাত্র জিয়ান্দ বালোচ বলেন, “ট্রেন ছিনতাইয়ের সময় কিছু যাত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই ব্যক্তিদের উদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সেনাবাহিনী সফল অভিযানের গল্প বানাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “ইসলামাবাদ পণবন্দিদের জীবন নিয়ে চিন্তিত নয়, তারা কেবল নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছে।’’

মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি

এই ঘটনায় নিহতদের সংখ্যা নিয়েও বড়সড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান সেনার দাবি, মাত্র একজন সেনা নিহত হয়েছে, কিন্তু তারা ৩৩ জন বিদ্রোহীকে হত্যা করেছে। একইসঙ্গে, বিদ্রোহীদের পালানোর পথ বন্ধ বুঝতে পেরে বিএলএ ২৭ জন পণবন্দি সেনাকে হত্যা করেছে

অন্যদিকে, বিএলএ দাবি করছে, পাকিস্তান সেনার আক্রমণে ৫০ জন পণবন্দি নিহত হয়েছেন। বিদ্রোহীদের দাবিমতে, সেনাবাহিনীর আক্রমণের ফলে তাদের ৩৩ জন যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে, যার ফলে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৮৩। বাস্তবে কতজন মারা গেছেন, তা নিয়ে রহস্য ঘনিয়ে উঠছে।

মৃতদেহ লোপাটের অভিযোগ

পাকিস্তান সেনার দাবি, অভিযানে কোনো নিরীহ নাগরিক নিহত হয়নি। কিন্তু বালোচিস্তানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আখতার মেঙ্গল এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “পাকিস্তান সেনার হামলায় বহু সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন, এবং শতাধিক সেনাও প্রাণ হারিয়েছে।’’

এছাড়া, বালোচিস্তানের রেলের এক কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, সেনাবাহিনী ২৫টি মৃতদেহ উদ্ধার করে মাচো শহরে পাঠিয়েছে, যেখানে ১৯ জন সেনা, একজন পুলিশ ও একজন রেল কর্মকর্তা রয়েছেন।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, কোয়েটা রেল স্টেশনে ১৫০-২০০টি কফিন পাঠানো হয়েছে, যা সেনাবাহিনীর ঘোষিত মৃতের সংখ্যার চেয়ে তিন গুণ বেশি। এতে আরও সন্দেহ দানা বাঁধছে যে পাকিস্তান সেনা মৃতদেহ গোপন করছে

দোষ চাপানোর কৌশল: ভারত ও আফগানিস্তান

পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে পাকিস্তান সেনা এবং সরকার আফগানিস্তানের তালিবান সরকার ও ভারতের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। ইসলামাবাদের দাবি, আফগানিস্তান থেকে স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে বিদ্রোহীদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল, যার ফলে সেনাবাহিনী অভিযানে বাধার সম্মুখীন হয়।

এদিকে, আফগানিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র আব্দুল কাহার বলখি পাল্টা বিবৃতি দিয়ে বলেন, “বালোচিস্তানের ঘটনার সঙ্গে আফগানিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলামাবাদ তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় নজর দিক, দোষারোপের রাজনীতি না করুক।’’

ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়া

শাহবাজ শরিফ সরকার শেষ পর্যন্ত ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়ার অভিযোগ তোলে। এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জওসওয়াল কটাক্ষ করে বলেন, “বিশ্ব জানে, সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর কোথায় রয়েছে।’’

সেনার মিথ্যার ইতিহাস

পাকিস্তান সেনার মিথ্যাচারের ইতিহাস দীর্ঘ। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধে নিহত পাক সেনাদের দেহ নিতে অস্বীকার করেছিল পাকিস্তান সরকার, যা শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাই সমাধিস্থ করে। ফলে, জাফর এক্সপ্রেস অপহরণকাণ্ডেও মৃতদেহ লোপাটের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না

শেষ কথা

জাফর এক্সপ্রেস অপহরণ এবং সেনাবাহিনীর তথাকথিত ‘উদ্ধার অভিযান’ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছেই না। সেনাবাহিনীর দাবি ও বিদ্রোহীদের বক্তব্যের মধ্যে বড়সড় ফারাক রয়েছে। তথ্য লুকানো, মৃতদেহ গোপন করা, এবং ভারত-আফগানিস্তানকে দোষারোপ করার প্রবণতা আবারও প্রমাণ করলো যে, পাকিস্তান সেনা সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে মরিয়া।

দোলে তারকাদের মতো সাজুন: রঙের উৎসবে ফ্যাশনের ছোঁয়া

Read more

Local News