লাঠির ঘা সয়েও পিছু হটেননি শিক্ষকরা
চাকরি ফেরতের দাবিতে বিকাশ ভবনের সামনে তিন দিন ধরে চলছে শিক্ষকদের অবস্থান বিক্ষোভ। লাঠিচার্জে রক্তাক্ত হয়েছেন অনেকেই, তবু প্রতিবাদে ইতি নয়। “চাকরি না ফেরা পর্যন্ত সরছি না”— এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই শনিবারও অবস্থানে অনড় রইলেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। আর তাঁদের পাশে দাঁড়াল সেই ছাত্রছাত্রীরাই, যাঁদের ভবিষ্যৎ গড়তে কখনও তাঁরা ছিলেন স্কুলে, ক্লাসরুমে।
বৃহস্পতিবার পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে এক অভিনব দৃশ্য দেখা গেল। করুণাময়ী থেকে বিকাশ ভবন পর্যন্ত মিছিল করল বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। হাতে ছিল গোলাপ আর পেন— পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে তাঁরা বুঝিয়ে দিল, এই আন্দোলন কেবল চাকরি ফেরানোর নয়, এটা ন্যায়েরও লড়াই।
অবস্থান মঞ্চে প্রতীকী ক্লাসরুমও তৈরি হয়েছিল। সরকারি, বেসরকারি ও কেন্দ্রীয়— সব ধরনের স্কুল মিলিয়ে ১০টিরও বেশি স্কুলের পড়ুয়ারা অংশ নেয়। তাদের সঙ্গেই ছিলেন অভিভাবকরাও। কেউ বলছে, “আমাদের শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে, আমরা তা মানতে পারছি না।” আবার কেউ বলছে, “যাঁরা আমাদের পড়িয়েছেন, তাঁদের এমন দুর্দশা— পাশে না দাঁড়িয়ে পারলাম না।”
তবে প্রশ্ন উঠেছে— পড়ুয়াদের এই আন্দোলনে আনার পিছনে কি কোনও কৌশল কাজ করছে? আন্দোলনকারী শিক্ষকরা সে দাবি সরাসরি অস্বীকার করেছেন। চাকরিচ্যুত শিক্ষক মেহবুব মণ্ডল বলেন, “আমরা কোনও দিনই পড়ুয়াদের ঢাল বানাতে চাইনি। কিন্তু ওরা নিজেরাই এসেছে, কারণ ওরা দেখেছে, কীভাবে তাদের শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হচ্ছেন।”
চাকরি ফেরানোর দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি, এখন ঘনীভূত হয়েছে আর একটি বিতর্ক— সরকারের নীরবতা। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। সেই অভাবে প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। তবে সবচেয়ে বেশি শোরগোল পড়েছে ফিরহাদ হাকিমের একটি মন্তব্য ঘিরে। তিনি বলেন, “এটা নাটক চলছে। বেশিরভাগ মানুষ বাড়ি চলে গেছেন, যারা ক্যামেরার সামনে মুখ দেখাতে চায়, তারাই বসে আছে।”
এই মন্তব্যের কড়া জবাব দেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। মেহবুব মণ্ডল পাল্টা বলেন, “নাটক তো তখনই হয়, যখন জনসমক্ষে জনপ্রতিনিধি টাকা কাগজে মুড়ে নেন আর সেটি সত্যি প্রমাণিত হয়। তাহলে এই আন্দোলন তো তার চেয়ে অনেক বেশি বাস্তব।”
শনিবার ও রবিবার ছুটি থাকায় বিকাশ ভবন বন্ধ। তাই কোনও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা না হলেও, অবস্থান চলবে বলেই জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সরকারের প্রতিক্রিয়া না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
একটা বিষয় স্পষ্ট— শুধু শিক্ষকরা নয়, সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকেও এখন এই প্রতিবাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে মানুষ। আর ছাত্রছাত্রীদের এই মানবিক সংহতি দেখিয়ে দিচ্ছে, কোনও আন্দোলন শুধু চাকরি নয়, মূল্যবোধেরও প্রশ্ন হয়ে উঠতে পারে।
কন্যাকে বিশেষ কারণে কান-এ নিয়ে যান ঐশ্বর্যা! বিদেশি উৎসবে আরাধ্যার প্রিয় মুহূর্ত কী?

