ঘন ঘন প্রস্রাব নয়!
ডায়াবিটিস বা চিনি রোগ নিয়ে সবাই শুনেছেন, আর সাধারণত ঘন ঘন প্রস্রাব, বারবার পিপাসা লাগা কিংবা কেটে যাওয়া ঘা সহজে শুকে না যাওয়া— এগুলোই রোগটির আগে থেকে সতর্কবার্তা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এর বাইরে আরও অনেক ছোট-বড় লক্ষণ আছে যেগুলো আমাদের শরীর থেকেই সাবধান হওয়ার সংকেত দেয়। তাই শুধু প্রস্রাবের বদলে শরীরের অন্য কোনো বদলও যেন অবহেলা না করি, এটাই জরুরি।
ডায়াবিটিস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অভিজ্ঞান মাঝি জানাচ্ছেন, “অনেক সময় শরীরে এমন কিছু উপসর্গ দেখা যায় যা আমরা প্রথমে গুরুত্ব দেই না। কিন্তু আসলে সেইগুলোই ডায়াবিটিসের ইঙ্গিত হতে পারে। শরীর যখন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তখন নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে।”
তাহলে চলুন জেনে নিই, ডায়াবিটিসের আরও কোন কোন লক্ষণ আমাদের সতর্ক করে দেয়—
আচমকা ওজন কমে যাওয়া:
হঠাৎ করে ওজন কমছে দেখে অনেকেই খুশি হলেও এটা ডায়াবিটিসের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। কারণ ডায়াবিটিসে শরীর ঠিকমত গ্লুকোজ ব্যবহার করতে না পারায় শক্তি পেতে জমে থাকা মেদ পুড়তে থাকে। ফলে শরীরে ওজন কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
ঋতুস্রাবের অস্বাভাবিকতা:
অনিয়মিত মাসিক, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (পিসিওএস) থাকলে অবশ্যই সতর্ক হওয়া উচিত। পিসিওএস-এর সঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবিটিসের সম্পর্ক রয়েছে, কারণ এতে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। ফলে শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
প্রস্রাবে সংক্রমণ:
মহিলাদের মধ্যে প্রস্রাবে সংক্রমণ খুব সাধারণ, কিন্তু ওষুধ সেবনের পরও যদি পুনরায় সংক্রমণ হয় বা সারতে না চায়, তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করানো জরুরি। কারণ ডায়াবিটিস হলে রক্তে গ্লুকোজ বেশি থাকায় ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে।
ছত্রাকজনিত সংক্রমণ:
যৌনাঙ্গে বারবার ছত্রাক সংক্রমণ হওয়া, যেটা চিকিৎসার পরও চলে না, যেমন সাদা স্রাব, চুলকানি বা অস্বস্তি— এগুলোও ডায়াবিটিসের লক্ষণ হতে পারে। তখন অবশ্যই শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত।
ত্বকের রঙ পরিবর্তন:
হঠাৎ ত্বকের জেল্লা কমে যাওয়া, গলা, ঘাড়, বাহুমূলে কালচে ছোপ দেখা দেওয়াও ডায়াবিটিসের পূর্বলক্ষণ। কারণ ইনসুলিনের মাত্রা বাড়লে তা ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে এবং ত্বক বদলে যেতে পারে।
অভিজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলছেন, “যাদের মেটাবলিক সিন্ড্রোম আছে, তাদের ক্ষেত্রে ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বেশি। মেটাবলিক সিন্ড্রোম মানে শরীরের রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, স্থূলত্ব, শারীরিক অনুশীলনের অভাব এবং জেনেটিক কারণে শরীরের নানা উপাদানের মাত্রা অস্বাভাবিক হওয়া। এগুলো মিলিয়ে ডায়াবিটিসের আশঙ্কা বেড়ে যায়।”
সুতরাং শুধু ঘন ঘন প্রস্রাব নয়, শরীরের ছোটখাটো পরিবর্তনগুলোকে গুরুত্ব দিন। যদি এমন লক্ষণ দেখা দেয়, দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ সময় মতো শনাক্ত ও চিকিৎসা করলেই ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি একটু বেশি যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন!

