খেয়েদেয়ে হাঁটা ভাল
খাবার পর হাঁটাহাটি করা অনেকের জন্য একটি সাধারণ অভ্যাস হলেও, এটি শুধু ভালো শারীরিক অবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে না, বরং আরও কিছু কৌশল প্রয়োগ করলে এর সুফল আরও বেড়ে যেতে পারে। পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকরা প্রায়ই খাবার পর হাঁটার পরামর্শ দেন, তবে একে সঠিকভাবে করার কিছু নিয়ম রয়েছে, যা আমাদের জীবনযাত্রায় বড়ো পরিবর্তন আনতে পারে।
হাঁটার উপকারিতা সম্পর্কে সবারই ধারণা রয়েছে, কিন্তু ঠিক কখন এবং কীভাবে হাঁটলে তা অধিক কার্যকর হবে, এই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা থাকা উচিত।
খাবার পর বিশ্রাম নিন:
খাবার খাওয়ার পরেই যেন কেউ দ্রুত হাঁটতে বের না হন, এটি একটি জরুরি বিষয়। অনেক সময় খাওয়ার পরপরই হাঁটা শুরু করলে পেটের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে যদি খাওয়া হয় ভারী কিছু, তবে তার পরপর হাঁটলে শরীরের উপর চাপ পড়ে এবং পেটেও অসুবিধা হতে পারে। আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, খাওয়ার অন্তত ১৫-৩০ মিনিট পর বিশ্রাম নেওয়া উচিত, তারপর ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করা উচিত। এই সময় বিশ্রামে থাকতে আপনার পেটের হজম প্রক্রিয়া সহজতর হবে এবং হাঁটার সময় কোনো অস্বস্তিও হবে না।
আরাম করে হাঁটুন:
খাবারের পরে হাঁটা শুরু করার সময় অনেকেই জোরে হাঁটতে শুরু করেন, কিন্তু তা খাবারের হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেহেতু খাবার তখন পেটের মধ্যে থাকে, দ্রুত হাঁটলে তা উপরের দিকে উঠে আসতে পারে বা বমি বমি ভাব হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে, স্বাভাবিক গতিতে হাঁটা উচিত। এতে খাবার সঠিকভাবে হজম হবে এবং শরীরে অতিরিক্ত চাপও পড়বে না।
হাতের ব্যায়াম:
হাঁটতে হাঁটতে কিছু সহজ ব্যায়ামও করা যেতে পারে, যা শরীরের আরও ভালো উপকারে আসে। হাঁটতে হাঁটতে হাতের মুঠো খুলে বন্ধ করা, কাঁধ ঘোরানো বা কব্জি ঘোরানোর মতো ছোট ব্যায়াম করা শরীরের জন্য উপকারী। এর ফলে হাত, কবজি এবং কাঁধের পেশি মজবুত হয় এবং দেহের অন্যান্য অংশেও রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এটি শরীরকে আরও সচল রাখে এবং হাঁটার সময় এক ধরনের ছন্দ তৈরি করে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম:
হাঁটতে হাঁটতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে তারও অনেক উপকারিতা আছে। বিশেষ করে, শ্বাস নেওয়ার সময় নাক দিয়ে গভীর শ্বাস নেওয়া এবং তারপর ঠোঁট দিয়ে ধীরে ধীরে তা ছাড়লে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক থাকে। এটি শরীরের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। হাঁটার সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতি মনোযোগী হলে শরীর দ্রুত অক্সিজেন পায় এবং এর ফলে হাঁটার কার্যকারিতা আরও বেড়ে যায়। এটি এক ধরনের শরীরচর্চা হিসেবেও কাজ করে, কারণ যে কোনো শারীরিক কসরতেই শরীরের অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, এবং এই শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম তার যোগান দিতে সাহায্য করে।
হাঁটার সময় মনোযোগ দিন শরীরের অবস্থানেও:
কেবল হাঁটলেই হবে না, হাঁটার সময় সঠিক পজিশনে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটার সময় শরীর সোজা রাখুন এবং মাথা সরাসরি রাখুন। এতে পিঠের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে না এবং হাঁটতে গিয়ে কোনো ধরনের অস্বস্তি হবে না। এ ছাড়া হাঁটার গতিও যেন না খুব দ্রুত হয়, না খুব ধীর। শরীরের ছন্দে হাঁটলে আপনি যে উদ্দেশ্যে হাঁটছেন, সেই সুফলটি আরও দ্রুত পাবেন।
এই ছোট্ট কৌশলগুলো মেনে চললে খাওয়ার পর হাঁটাহাটি আপনার শরীরের জন্য আরও উপকারী হয়ে উঠবে। তাই এবার থেকে যদি খাওয়ার পর হাঁটতে বের হন, তাহলে কিছু নিয়ম মেনে হাঁটুন এবং তার সুফল উপভোগ করুন।