Sunday, May 11, 2025

এসএসসি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন: ‘কেন অতিরিক্ত শূন্যপদ? ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ কোথায়?’

Share

এসএসসি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন

এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে উত্তাল রাজ্য, এবার সুপ্রিম কোর্টে উঠে এলো নতুন প্রশ্ন। নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে আজ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরা হয়। প্রধান বিচারপতি সরাসরি জানতে চান, “কেন অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়েছিল? ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ কেন সংরক্ষণ করা হয়নি?” এই প্রশ্নের মুখে রাজ্য এবং সিবিআই-এর অবস্থান বেশ চাপে পড়েছে।

অতিরিক্ত শূন্যপদ নিয়ে প্রশ্ন

শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি রাজ্যের অবস্থান জানতে চান। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “রাজ্যের কি মনে হয় বৈধ এবং অবৈধ চাকরিপ্রাপ্তদের আলাদা করা সম্ভব? নাকি পুরো প্রক্রিয়াই বাতিল হওয়া উচিত?” সিবিআই যে একাধিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তাতে বৈধ ও অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের চিহ্নিত করা সম্ভব বলেই উল্লেখ রয়েছে।

রাজ্যের আইনজীবী এদিন দাবি করেন, “যে সংখ্যক নিয়োগপ্রাপ্তদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে সমস্ত ২৬ হাজার চাকরিপ্রাপ্তকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া অমানবিক হবে।” এই বক্তব্যের জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, “অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করাই কি অবৈধ নিয়োগের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য হয়েছিল?”

ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ নিয়ে প্রশ্ন

শুধু অতিরিক্ত শূন্যপদ নয়, ওএমআর শিট নিয়েও একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি। তার প্রশ্ন, “ওএমআর শিট কবে নষ্ট করা যায়, সেই বিষয়ে কোনও নিয়ম রয়েছে কি? এসএসসি কি ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ সংরক্ষণ করেছিল? মিরর ইমেজ থাকলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যেত। মূল নথি হিসাবে ওএমআর শিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেটা কোথায়?”

রাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “ওএমআর শিট এক বছর পর নষ্ট করে দেওয়া যায়।” তবে মিরর ইমেজ সংরক্ষণ করা হয়নি। প্রধান বিচারপতি এর জবাবে বলেন, “যদি ওএমআর শিট বা তার মিরর ইমেজ সংরক্ষণ করা না হয়ে থাকে, তবে বৈধ-অবৈধ আলাদা করা কীভাবে সম্ভব? পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব স্পষ্ট।”

সার্ভারে ওএমআর শিটের তথ্য নেই?

প্রধান বিচারপতির আরও এক প্রশ্ন ছিল, “এসএসসি-র সার্ভারে কি সমস্ত ওএমআর শিটের ডেটা রয়েছে? নাকি কিছু হারিয়ে গেছে?” তিনি উল্লেখ করেন, যদি ওএমআর শিট থেকে কোনো তথ্য গোপন করা হয়ে থাকে বা পরবর্তী সময়ে ভর্তির ক্ষেত্রে অনিয়ম ঘটে থাকে, তা এই নথি থেকেই প্রমাণ করা যেত। কিন্তু ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ বা স্ক্যানড কপি না থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না।

ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা

এই মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার স্কুল স্টাফ। তাদের ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে। নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাতিল হবে, নাকি বৈধ-অবৈধ পৃথক করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা এখনও অনিশ্চিত।

প্রধান বিচারপতির প্রশ্নে রাজ্য এবং সিবিআই উভয়ই চাপের মুখে পড়েছে। তদন্তের স্বচ্ছতা এবং নির্ভুলতার প্রশ্ন উঠেছে বারবার। এদিকে, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের একাংশের মতে, নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা রক্ষার জন্য মিরর ইমেজ সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি ছিল।

পরবর্তী পদক্ষেপ

এই মামলার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে এখন নজর সুপ্রিম কোর্টের দিকেই। প্রধান বিচারপতি এবং বিচারপতিরা যে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, তা ইঙ্গিত দেয়, আদালত নির্ভুল এবং স্বচ্ছ তদন্ত চায়। রাজ্য এবং সিবিআইকে একত্রে কাজ করে এই মামলার জট খুলতে হবে।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শেষ সিদ্ধান্তে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কতটা টিকে থাকবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Read more

Local News