এজরা স্ট্রিটে আগুন
কলকাতার এজরা স্ট্রিটে বুধবার রাত ৮টা নাগাদ ঘটে গেল এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যা ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি করে। টেরিটি বাজারের ধারে অবস্থিত একাধিক দোকান মুহূর্তের মধ্যে আগুনের কবলে পড়ে। দমকলের ১৫টি ইঞ্জিনের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও ব্যবসায়ীরা রয়েছেন চরম উদ্বেগে।
আগুন লাগার প্রাথমিক কারণ
ঘটনার সূত্রপাত হয় এজরা স্ট্রিটের কাঠের বাক্সের একটি গুদামে। গুদামটি টেরিটি বাজারের উল্টোদিকে অবস্থিত ছিল। গুদামে প্রচুর দাহ্য পদার্থ মজুত থাকার ফলে, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের দোকানগুলিতে। দমকলকর্মীদের মতে, আশেপাশে বিদ্যুতের তারের একটি গুদাম থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। শুরুতেই যে গুদামে আগুন লাগে, সেখানে আগুন ধরার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো ত্রুটি কিংবা শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুন লাগতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
দমকলের নিরলস প্রচেষ্টা
প্রথমে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, তবে আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে আরও ইঞ্জিনের প্রয়োজন হয়। পরে ১৫টি দমকল ইঞ্জিন একযোগে কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু নিজেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। রাত ৯টা ১৫ মিনিট নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও কিছু ছোট ছোট জায়গায় এখনও আগুন ছিল। দমকলমন্ত্রী জানিয়েছেন, আনাচে-কানাচে জ্বলতে থাকা আগুনগুলো নিভিয়ে ফেলার কাজ চলছে।
ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক
এই অগ্নিকাণ্ডের কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রবল ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন। কাঠের বাক্স, বৈদ্যুতিক সামগ্রী এবং অন্যান্য পণ্যের ক্ষতি হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় দোকানদার ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কালীপুজো ও দীপাবলির আগে যখন বাজারে মানুষের ভিড় এবং বিক্রির চাপ থাকে, তখন এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ব্যবসায়ীদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। দোকানদারদের অনেকেই তাদের ক্ষয়ক্ষতির জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, কারণ এই সময়ে ব্যবসা তুঙ্গে থাকার কথা।
আগুন লাগার সময়ের পরিস্থিতি
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগুন লাগার বিষয়টি প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ নজরে আসেনি। তখন দোকানদারেরা নিজেদের প্রচেষ্টায় আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু আগুন এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, দমকল বিভাগে খবর পাঠানো হয়। শুরুতে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এলেও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আরও ইঞ্জিন পৌঁছয়।
ভিড়ের মধ্যে আতঙ্ক
কালীপুজো ও দীপাবলির ঠিক আগে এজরা স্ট্রিটে প্রচুর মানুষের সমাগম দেখা যায়। এই সময় রকমারি নিয়ন লাইটের সাজসজ্জায় মেতে ওঠে ব্যবসায়ীরা। বুধবার রাতেও বাজার ছিল জমজমাট। হঠাৎ করে আগুন লাগার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ক্রেতারা। দোকানদার ও ক্রেতারা দ্রুত বাজার এলাকা খালি করতে শুরু করেন। এজরা স্ট্রিটের আশেপাশের এলাকাগুলি অত্যন্ত ঘিঞ্জি হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল, যা আরও আতঙ্ক তৈরি করেছিল।
প্রশাসনের তৎপরতা
দমকলকর্মীদের পাশাপাশি বউবাজার থানার পুলিশ ও কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দলও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আগুন যাতে আশপাশের বহুতল ভবনে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেই দিকেও সজাগ ছিল দমকল বিভাগ। আশপাশের লোকজনকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন সময়
এজরা স্ট্রিটের ব্যবসায়ীরা এখন চরম দুশ্চিন্তায় আছেন। তাদের অনেকেরই পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কালীপুজোর সময় যখন দোকানদারদের ব্যবসায় লাভের আশা ছিল, তখন এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড তাদের জন্য বড় ধাক্কা। অনেক দোকানদারই আর্থিক ক্ষতির কারণে পুনরায় তাদের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান।
এই অগ্নিকাণ্ড স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মনোবলে ধাক্কা দিলেও দমকল বিভাগের দ্রুত তৎপরতায় বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।