এআই-এর জাদু
স্তন ক্যানসার নারীদের জন্য এক গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। যদি প্রথম পর্যায়েই রোগ ধরা পড়ে, তাহলে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমানো সম্ভব। এবার সেই লক্ষ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ম্যামোগ্রাফির মাধ্যমে আরও নির্ভুল ও দ্রুত ফলাফল পাওয়ার পথে এগোচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
বহু বছর ধরে স্তন ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য ম্যামোগ্রাফি পরীক্ষার উপর নির্ভর করা হয়। কিন্তু অনেক সময় এই পরীক্ষায় ভুল রিপোর্ট আসে, যা চিকিৎসাকে আরও জটিল করে তোলে। সুইডেনের বিজ্ঞানীরা এই সমস্যার সমাধানে এআই-ভিত্তিক ম্যামোগ্রাফি স্ক্রিনিং পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁদের দাবি, নতুন প্রযুক্তি স্তনের কোষের যেকোনো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দ্রুত শনাক্ত করতে পারবে।
গবেষণায় কী জানা যাচ্ছে?
সুইডেনের বিজ্ঞানীরা ২০২১ সালে এক লক্ষ মহিলার উপর একটি পরীক্ষা চালু করেন এবং ২০২৩ সাল পর্যন্ত তার ফলাফল প্রকাশ করেছেন। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘দ্য ল্যানসেট ডিজিটাল হেলথ’-এ।
পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, এআই-এর সাহায্যে করা ম্যামোগ্রাফি পরীক্ষায় অনেক বেশি নির্ভুলভাবে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। সাধারণ ম্যামোগ্রাফির তুলনায় এআই ব্যবহারে ফলাফল অনেক দ্রুত পাওয়া যাচ্ছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি ১,০০০ জন মহিলার মধ্যে অন্তত ৬.৪ শতাংশের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে, যা আগের তুলনায় অনেক নিখুঁতভাবে ধরা পড়েছে।
এআই কীভাবে ম্যামোগ্রাফি স্ক্রিনিংয়ে বিপ্লব আনবে?
কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের অঙ্কোলজিস্ট ড. শুভদীপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “যদি স্তন ক্যানসার দ্রুত শনাক্ত করা যায়, তাহলে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। এআই-এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি দ্রুত এবং নির্ভুল ফলাফল দিতে পারে।”
আগে ম্যামোগ্রাফির ভুল রিপোর্টের কারণে অনেক রোগীর চিকিৎসায় জটিলতা তৈরি হতো। তবে এআই ব্যবহারে ভুল রিপোর্টের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যে নেমে আসবে। যদিও এই গবেষণা এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে, তবুও বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে, ভবিষ্যতে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে স্তন ক্যানসার নির্ণয় আরও উন্নত ও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে।
এআই কি ডাক্তারদের জায়গা নিয়ে নেবে?
এআই নিখুঁতভাবে স্তন ক্যানসার শনাক্ত করতে পারলেও এটি ডাক্তারদের জায়গা নেবে না। বরং চিকিৎসকদের আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। রেডিয়োলজিস্টরা সাধারণ পরীক্ষায় যা বুঝতে পারেন না, এআই সেই সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলোও শনাক্ত করতে পারবে।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ড. মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “ক্যানসার কোষের অনিয়মিত বিভাজন শুরু হয়েছে কি না, তা এআই খুব সহজেই শনাক্ত করতে পারবে। প্রতিটি ক্যানসার রোগীর অবস্থার ধরন আলাদা হয়। যত বিশদ তথ্য জানা যাবে, তত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাবে।”
ভবিষ্যতে এআই-এর ব্যবহার কোথায় যেতে পারে?
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে কেবল স্তন ক্যানসার নয়, অন্যান্য ক্যানসার নির্ণয়েও এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যদি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে শনাক্ত করা যায়, তাহলে অনেক মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “এআই প্রযুক্তি চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। রোগ নির্ণয়ে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানুষের জীবন রক্ষা করা আরও সহজ হয়ে উঠবে।”
তাই আগামী দিনে এআই শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়নই নয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রেও এক নতুন বিপ্লব আনতে চলেছে।
শিবলিঙ্গে দুগ্ধস্নান, মহাকুম্ভে কি এবার পুণ্যের পথে ভিকি কৌশল?