Friday, March 21, 2025

উপগ্রহের রাজা কোন দেশ? মহাকাশে আধিপত্য বিস্তারকারী সাত দেশের তালিকা

Share

উপগ্রহের রাজা কোন দেশ?!

মানব সভ্যতা মহাকাশ জয়ের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পাঠানো প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক-১ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত হাজার হাজার উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। এই উপগ্রহগুলোর কাজ ভিন্ন ভিন্ন—আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, সামরিক নজরদারি, যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করা কিংবা মহাকাশ গবেষণা।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোন দেশ মহাকাশে সবচেয়ে বেশি উপগ্রহ পাঠিয়েছে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়ানো উপগ্রহের সংখ্যার বিচারে শীর্ষ সাতটি দেশের নাম।

১. যুক্তরাষ্ট্র – মহাকাশ গবেষণার অগ্রদূত

মহাকাশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক উপগ্রহের মালিক যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে আমেরিকার প্রায় ৩,০০০-এর বেশি উপগ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে রয়েছে। নাসা (NASA), সামরিক বাহিনী, এবং বেসরকারি সংস্থা স্পেস-এক্স (SpaceX) ও অন্যান্য কোম্পানির পাঠানো এসব উপগ্রহ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, সামরিক নজরদারি, গবেষণা ও টেলিযোগাযোগে ব্যবহৃত হয়।

২. চীন – দ্রুত উন্নতির পথে

যুক্তরাষ্ট্রের পরেই মহাকাশে সবচেয়ে বেশি উপগ্রহ রয়েছে চীনের। বর্তমানে ৫০০-এর বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছে চীন। সামরিক, বাণিজ্যিক এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য চীন নিয়মিত উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করছে। দেশটির ‘বেইদৌ’ (BeiDou) নেভিগেশন সিস্টেম গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS)-এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

৩. রাশিয়া – মহাকাশ গবেষণার পুরোধা

রাশিয়া মহাকাশ গবেষণার অন্যতম পথিকৃৎ। বর্তমানে রাশিয়ার ১৬৯টি উপগ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে রয়েছে। সামরিক নজরদারি থেকে শুরু করে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ এবং টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপগ্রহগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

৪. যুক্তরাজ্য – প্রযুক্তির শক্তি

যুক্তরাজ্যের মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। বর্তমানে ব্রিটেনের পাঠানো ১৩৫টি উপগ্রহ মহাকাশে রয়েছে। মূলত টেলিযোগাযোগ, গবেষণা এবং সামরিক ব্যবস্থাপনার জন্য এগুলো ব্যবহার করা হয়।

৫. জাপান – প্রযুক্তির জনপদ

উন্নত প্রযুক্তির দেশ হিসেবে জাপান মহাকাশ গবেষণায়ও পিছিয়ে নেই। বর্তমানে ৭৮টি উপগ্রহ মহাকাশে রয়েছে, যা মূলত আবহাওয়া পূর্বাভাস, যোগাযোগ ও গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। জাপানের ‘জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি’ (JAXA) বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।

৬. ভারত – কম খরচে বেশি কার্যকরী

ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO) বিশ্বব্যাপী স্বল্প খরচে উন্নত মানের মহাকাশ প্রকল্প পরিচালনার জন্য পরিচিত। বর্তমানে ৬৬টি উপগ্রহ মহাকাশে রয়েছে, যা মূলত টেলিযোগাযোগ, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও সামরিক কাজে ব্যবহৃত হয়। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর নজরদারি বাড়াতে ভারত বেশ কয়েকটি রাডার ইমেজিং স্যাটেলাইট (RISAT) পাঠিয়েছে।

৭. কানাডা – মহাকাশ গবেষণায় দৃঢ় পদক্ষেপ

তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে কানাডা, যাদের ৫৬টি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে রয়েছে। মূলত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, টেলিযোগাযোগ ও পরিবেশগত গবেষণার জন্য কানাডার উপগ্রহগুলো ব্যবহৃত হয়।

বিশ্বব্যাপী মাল্টিন্যাশনাল উপগ্রহ

একটি দেশের মালিকানার বাইরে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যৌথ উদ্যোগে তৈরি মাল্টিন্যাশনাল উপগ্রহের সংখ্যাও কম নয়। বর্তমানে প্রায় ১৮০টি মাল্টিন্যাশনাল উপগ্রহ মহাকাশে কাজ করছে, যা মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো সংস্থাগুলোর অধীনে পরিচালিত হয়।

বেসরকারি খাতের ভূমিকা

বর্তমানে শুধুমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, স্পেস-এক্স, ব্লু অরিজিন (Blue Origin) এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলোও মহাকাশ গবেষণায় বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে। ফলে অপেক্ষাকৃত কম সম্পদশালী দেশগুলোও মহাকাশ গবেষণায় অংশ নিতে পারছে।

উপসংহার

মহাকাশ গবেষণা আর কেবল কয়েকটি দেশের একচেটিয়া আধিপত্য নয়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ ও বেসরকারি সংস্থা মহাকাশ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে। তবে এখনো যুক্তরাষ্ট্র, চীন, এবং রাশিয়া মহাকাশ গবেষণার প্রধান শক্তি হিসেবে নিজেদের জায়গা ধরে রেখেছে। ভারত, জাপান এবং অন্যান্য দেশও এই তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে তাদের কার্যক্রম আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়।

বিয়ের মাস দুয়েকের মধ্যে স্বামীর সঙ্গে মন কষাকষি শোভিতার, কোথায় ভুল করেছিলেন নাগা চৈতন্য?

Read more

Local News