Wednesday, April 30, 2025

আবিষ্কারের চমক: ধু-ধু মরুভূমির বুকে এক সময় বইত নদী, জলে ভরপুর ছিল বিশাল হ্রদ!

Share

ধু-ধু মরুভূমির বুকে এক সময় বইত নদী!

আজ যেখানে চোখ যায়, শুধু ধু-ধু বালি আর উত্তপ্ত বাতাস—সেই আরবের মরুভূমিতেই এক সময় ছিল সবুজের রাজত্ব, ছায়াঘেরা অরণ্য, এবং প্রবাহমান নদী-হ্রদ! অবিশ্বাস্য মনে হলেও, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

বিশ্বের অন্যতম শুষ্ক ও গরম এলাকা হিসেবে পরিচিত আরব উপদ্বীপে এখন কেবল রোদ, বালি আর খরা। অথচ বিজ্ঞানীদের দাবি, কয়েক হাজার বছর আগে এখানেই ছিল শান্ত জলাশয়, সাভানা ঘেরা ভূমি ও প্রবাহমান জলধারা। অর্থাৎ, মরুভূমির এই দৃশ্যটা খুব একটা পুরনো নয়!

জেনিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল্লাহ জাকি ও সেবাস্তিয়ান ক্যাসেলটর্ট, সৌদি আরবের কিং আবদুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল কাদের এম আফিফি এবং গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল পেট্রাগলিয়ার নেতৃত্বে গবেষক দল এই বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করেছেন ‘কমিউনিকেশন্‌স আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ জার্নালে।

তাঁদের গবেষণায় উঠে এসেছে, আরবের খালি কোয়ার্টার বা রুব আল-খালির গভীরে লুকিয়ে ছিল এক বিশাল হ্রদের অস্তিত্ব। এই হ্রদটি প্রায় ১১০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং ছিল ৪২ মিটার গভীর—আয়তনে প্রায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ মিশিগান-হুরনের সমতুল্য।

বালির নিচে মাটির স্তরে পাওয়া গেছে পলির আস্তরণ। উপগ্রহচিত্র এবং রেডিয়ো-কার্বন ডেটিং বিশ্লেষণে বোঝা গেছে, কয়েক হাজার বছর আগে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে হ্রদটি এত বড় হয়েছিল যে, এক পর্যায়ে তার জল উপচে পড়ে মারাত্মক বন্যা সৃষ্টি করে। ওই বন্যা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, তা প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক উপত্যকা ধ্বংস করে দেয়।

এই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, শুধু হ্রদ নয়—১১ হাজার বছর আগে আরবে ছিল নদী, সাভানা এবং সবুজ গাছপালার প্রাচুর্য। ‘সবুজ আরব’ নামেই সেই সময়কে অভিহিত করছেন গবেষকেরা।

এই প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের প্রভাব ছিল মানব সভ্যতার ওপরও। হ্রদ-নদী ও তৃণভূমির প্রাচুর্য আফ্রিকা থেকে মানুষকে এই অঞ্চলে টেনে আনে। আদিম কৃষক ও শিকারিরা এই এলাকায় বসতি গড়ে তোলে। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ৬ হাজার বছর আগে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যায়, এলাকা হয়ে ওঠে শুষ্ক এবং মানুষরা বাধ্য হয় অন্যত্র সরে যেতে।

আজও আরব বিশ্বের বিস্তীর্ণ তেলের ভাণ্ডার এই অতীতের প্রমাণ। খনিজ তেলের উৎসই তো নদী, হ্রদ বা জলাশয়ে জমে থাকা শৈবাল ও জীবাশ্ম!

তবে আশার কথা—সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কিছু কিছু মরু এলাকায় আবার সবুজের ছোঁয়া ফিরছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। হয়তো ভবিষ্যতে আবারও ফিরবে সেই সবুজ ‘আরব’, যেখানে নদী বইবে, হ্রদ ঝলমলাবে আর জীবন ফিরবে বালির রাজ্যে!

মুর্শিদাবাদে ধীরে ধীরে স্বস্তির হাওয়া, ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ

Read more

Local News