Wednesday, April 2, 2025

আপনার শিশুর কি এডিএইচডি? লক্ষণগুলো চিনে নিন, কিন্তু সতর্ক হন ভুল বোঝাবুঝি থেকে!

Share

এডিএইচডি: নামটা এখন সকলের মুখে মুখে, কিন্তু বুঝতে ভুল করবেন না

অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজ়অর্ডার (ADHD) – নামটা শুনলেই হয়তো মনে হয় খুব জটিল কিছু। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাটের স্বীকারোক্তির পর, এটি নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই নিজেদের বা তাঁদের সন্তানের আচরণের সঙ্গে এডিএইচডি-র লক্ষণ মেলানোর চেষ্টা করছেন, আর মনে করছেন সমস্যার মূল এটাই। কিন্তু আসলেই কি তাই? মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আলতাফ হোসেন আনন্দবাজার ডট কমকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানালেন, শুধুমাত্র লক্ষণ মিলে গেলেই এডিএইচডি ধরে নেওয়া ঠিক নয়।

এডিএইচডি: আসলে এটি কী?

এডিএইচডি একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল কন্ডিশন। শিশুর মস্তিষ্ক যখন ধীরে ধীরে বিকশিত হয়, তখনই এই সমস্যার লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি অনেকাংশেই জিনগত, তবে পরিবেশেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিশুর বেড়ে ওঠার পরিবেশ, পারিপার্শ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রভাব এডিএইচডি-র প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সহজভাবে বলতে গেলে, প্রতিটি মানুষের প্রতিক্রিয়া আলাদা হয়। কেউ সহজেই মানিয়ে নেয়, কেউবা কঠিন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়ে। এই পার্থক্যের পেছনে জিনগত ও পরিবেশগত কারণ থাকে।

লক্ষণ: কেমন হলে সতর্ক হবেন?

মনোবিদদের মতে, এডিএইচডি-র তিনটি মূল উপসর্গ রয়েছে:

১. অতি চঞ্চলতা (Hyperactivity): শিশুটি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি নড়াচড়া করে, এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে না।

  1. মনোযোগের অভাব (Attention Deficit): পড়াশোনা বা যে কোনো কাজে একাগ্রতা ধরে রাখতে সমস্যা হয়, সহজেই মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়।
  2. না ভেবেচিন্তে কাজ করা (Impulsiveness): হুট করে কিছু বলে বা করে ফেলে, যে কারণে পরে আফসোস হয়।

তবে শুধু এই তিনটি লক্ষণই নয়, আরও কিছু আচরণগত বৈশিষ্ট্যও দেখা যায়, যেমন:

  • সহজেই রেগে যাওয়া বা কান্না পেয়ে যাওয়া।
  • আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অসুবিধা হওয়া।
  • সামাজিকভাবে মানিয়ে চলতে না পারা।
  • কোনো কাজে উৎসাহ কম থাকা।
  • সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হওয়া।

তাহলে কি এই লক্ষণ থাকলেই এডিএইচডি?

এখানেই বিভ্রান্তির জায়গা। অনেক শিশুই কমবেশি এসব আচরণ দেখায়, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাদের এডিএইচডি আছে। চিকিৎসকরা বলছেন, যদি লক্ষণগুলো অত্যন্ত তীব্র হয়, শিশুর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করে, এবং বয়স অনুযায়ী আচরণে পার্থক্য দেখা যায়, তাহলে এডিএইচডি-র সন্দেহ হতে পারে।

ডাঃ আলতাফ হোসেন একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন: “মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক বিষয়, কিন্তু যদি দিনের পর দিন বিষণ্ণতা চলতেই থাকে, তাহলে সেটিকে আমরা ‘অবসাদ’ বলি। একইভাবে, মাঝে মাঝে মনোযোগ হারানো, চঞ্চল হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু যখন এটি দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, তখনই এটি এডিএইচডি বলে ধরা হয়।”

সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

আপনার সন্তানের মধ্যে যদি উপরের লক্ষণগুলো প্রকটভাবে দেখা যায় এবং তার দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, শুধুমাত্র লক্ষণ মিলে গেলেই আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলেই শিশুর বিকাশ স্বাভাবিক পথে এগিয়ে যেতে পারে।

বিজেপি-এডিএমকে জোট নিয়ে নতুন জল্পনা: শর্তই কি আলোচনার মূল বিষয়?

Read more

Local News